মাজুল হাসানের একগুচ্ছ কবিতা
গূঢ়
দূর থেকে দাবানল সুন্দর। বলছি, চুলে আগুন জ্বালাবার কিংবদন্তী
তরুণ কবি হে, নিজের সমান বরফের চাঁই ও ভুল উৎসর্গের
পাণ্ডুলিপি নিয়ে আক্ষেপ করো না। ওতে সাগর-দক্ষিণে লঘুচাপ হয়
লোকালয়ে বাড়ে মাছবৃষ্টি। শান্ত হও চেলোবাদ। শান্ত হও।
রেত ও অপভ্রংশ নিয়েও একটা জীবন কাটিয়ে দেয়া যায়
যে নারী আলগোছে কেটে নিলো শব্দের আলজিভ। তুমি ঢুকে পড়লে
ঝাপসা ও হলুদ হতে থাকা ১টা ফুলদানির মর্মস্থলে— মুক্তি দাও তারে
গূঢ় অনুচ্চে। চিৎকারে প্রেমের পালক খসে পড়ে— জ্ঞাপনে আত্মার ধ্যান
দেয়াল
অধিকৃত লালের চেয়ে গোলাপকাঁটার কিংবদন্তি অধিক মনোহর
যেমনি দুই বোন—মোম ও বরফ; ঘিরে থাকে রূপকের জাদুদণ্ড
একটা বুড়ি কাছিমের চোরাপ্রেমে হয়তো একদিন গৃহান্তরী হব
পেরিয়ে যাব মেঘ, বোবা মেঘ, অন্ধ, উরগ, লোলুপ মোরগ
কোনো দেয়াল দুর্ভেদ্য নয়, যদিও লেখা থাকে ‘প্রবেশ সংরক্ষিত’
অশ্ব
ঝুম-অন্ধকারে চেনা সম্পর্ক নিয়ে বেশি নাড়াচাড়া করতে নেই
পাথর ও বিজলিলতা হাতে তখন যে কেউ কোচোয়ান হতে বাধ্য
উদ্দাম কেশর নয়, নয় ক্ষিপ্র করতল; রাত্রি স্বয়ং নীরব অশ্ব
কে আছে প্রথম প্রয়াসে নির্ভুলভাবে গরিমাচূড়ায় উঠতে পারে?
এক চুমুতে কাঠলিচুর বাগান ডিঙানোর কৌশলটুকু আমাদের
রেস্তোরাঁ
লোকটা খাচ্ছিল আগুনের কাটলেট। কাঁটাচামচও আগুনের
বিল চাইতেই বেয়ারার চোখে ঢুকিয়ে দিল নরকের পদাবলি
লোকটার ভাবনায় প্রবল অগ্ন্যুৎপাত ঘটাচ্ছিল ধা-চকচক স্ত্রী
ভেজা গ্রেনেড নিয়ে হ্যাংওভার কাটাচ্ছে সেজ-মেয়েটা
ছেলেটা অবশ্য এইসব বিগতযৌবনা হুঙ্কারে অবিচল
মানে ছেলেটা বাবার অগ্নিশর্মা মুখে ভুল করেও মুতে না
লোকটা খাবে আগুনের কাটলেট। কাঁটাচামচও আগুনের
জিরাফ
ডাকতে ডাকতে জিরাফের মতো অলৌকিক হয়ে গেছে গলা
এখন নিরাক্রোশ জলের মতো মৌন থাকি আগুন লাগার কালে
কেনো বারবার ভাসে বিষ্যুদবারের রানুপা ও দলাপাকা রক্ততিল?
মাইলের পর মাইল জ্যুলোজি ছিঁড়ে পালাচ্ছে ভয়ার্ত-সবুজ
ধাবমান ট্রেন—আমি কি সিন্দুরী আকাশ ছুঁতে পা'ব কোনোদিন?
কাঠের পা
মানুষ হয়তো সব সময় কাঠের পা'কে ঈর্ষা করে
নাহলে, ডকিয়ার্ডের পাশ দিয়ে একলা হেঁটে যাওয়া'য়
এত অনীহা ক্যানো? ভাবুন তো— পায়ে পরাগরেণু
ভিম্রুল পড়তে পড়তে চোখে সন্ধ্যা-অঙ্গার—
ওতে দহন শব্দটি পাকাপোক্ত হয়। মৌন আমার ৪র্থ মাত্রা
হরিণ
পৃথিবীর সব বই, বাসি পত্রিকা, ভূর্জপত্র, বাজারফর্দ,
তামাদি দলিল থেকে ণ-গুলো গিলে ফেলেছি,
লিপিকার তবু কি টের পাচ্ছি- পাতা গজানোর গন্ধ?
কোমল
ফুল, মেরুবিচ্ছূরণ, পাখপাখালি সবাইকে বিদায় বলেছি
গোলাপ বললে মনে হয় প্লাস্টিক, মিথ্যাবসন্তের আর্জি
প্রকৃতি থেকে গ্রহণ করছি না কিছুই, শুধু ১টা শব্দ 'শীত'
লৌহদণ্ডে জমে যাওয়া শীত; গনগনে কোমল বিস্মৃতি
পাথর ও বাতাস
বাতাস কায়োমনোপ্রাণে পাথর হতে চায়
তাই ওরা ঘোরে মানুষেরই চারিপাশ
এই দেহ পাথরের কাছে ঋণী, মন রণবিভ্রান্ত
কে তুমি অশ্ববায়ু?
রুদ্ধশ্বাস, আমাকে বাজাও
পরিত্যক্ত গন্ধক খনিতে দেখাও টলটলে হাসি