শ্রাবণে একগুচ্ছ কবিতা

অরুণাভ চট্টোপাধ্যায়
আলবিদা
আকাশের আয়ু পিচরাস্তায় উপচে পড়তে দেখলে
এক অবাস্তব প্রেম থেকে একরাশ কবিতার জন্ম হয়।
আঙুলের ফাঁকে জমতে থাকা নিকোটিন ফ্লেভারে
বাড়তে থাকে একাকিত্বের ভিড়।
এত জনসমুদ্রেও বুঝি না কোথায় হারিয়ে যাওয়া যায়—
শুধু করিডোরে ঝুলতে থাকা দীর্ঘশ্বাস অথবা
ধোঁয়া ওঠা চায়ের ভাড়ে নিজেকে বড় পরিপূর্ণ লাগে।
ঘড়ির ব্যস্ততা আমাকে আর আকাশ ছুঁতে দেয় না,
পৃথিবী জুড়ে ধ্যানে মগ্ন হয় যাবতীয় অপ্রাপ্তির দল।
আদিওস, আলবিদা।
কুমার দীপ
বৃষ্টিভেজা দু’চার পঙক্তি
সকাল থেকে একের পর এক মিছিল নিয়ে আসছে বৃষ্টি
অবিরাম স্লোগান ছিটোচ্ছে মাটিতে-সবুজে, ছাদের কার্নিশে...
করমচা-মেহগনি-কাঠবাদাম-নারকেল-আমলকী-কৃষ্ণচূড়ারা
মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছে বৃষ্টিভাষণ
সার্কাস-মোহিত বালকের ধরনে তাকিয়ে আছি জানালায়
চারদিকে ব্যাঙের সিম্ফনি
ভেতরেও;
কী আশ্চর্য ! ব্যাঙেরা এমন সরদ বাজাতে পারে
আগে তো শুনিনি !
তুমিও কখন পিয়ানো-আঙুলে দাঁড়িয়ে গিয়েছ
সে খবর ঢেকে রেখে কলহাস্যে হেঁটে গেছে সিক্ত কুসুমেরা!
চোখের পুকুরে থৈথৈ জল, আড়ালের ফুল ভাসে
দেয়ালের জন্মান্ধ ঘড়িটা এখনো বিকেলের ভুলে হাসে!
বিকাশ গায়েন
আসবাব
ছেড়ে গেছ যখন একেবারেই তো ছেড়ে যেতে পারতে। নোঙর ছেঁড়া নৌকো মাঝসমুদ্রের কোথায় ভেসে গিয়ে কোন দ্বীপে আটকে পড়েছ, সেটা ভেবে কষ্ট পেতে হতো না। মাঝেমধ্যে এই যে তোমার উপস্থিতি জানিয়ে যাওয়া দূর থেকে সে আরো পীড়াদায়ক। ভুলতে চাইছি অথচ ভুলতে পারছি না, ঘৃণা করতে চাইছি অথচ আমার সমস্ত ঘৃণা ঘুরে যাচ্ছে অন্যদিকে। জানি, আমার ভালো থাকা মন্দ থাকায় তোমার কিছু যায় আসে না, তোমার ভালো থাকা মন্দ থাকায় কণামাত্র বদল ঘটানোর কোনো ক্ষমতাই আমার নেই। তবে হঠাৎ হঠাৎ কেন দেখা দিতে আসো বলো? আমার কাছে তুমি তো আসলে একটি দূরত্ব। তোমাকে অতিক্রম করেই পাওয়া যাবে আমার সব ভালো থাকা। অথচ টেপফিতে না থাকলে হাতের বিত্তা দিয়েই তো মাপার কাজটি সেরে ফেলতে হয়। আমার কাছে যে তুমি আজও শিল্প, দূর থেকে টের পাই কীভাবে অন্যের হাতে ধীরে ধীরে হয়ে উঠছ নিছকই আসবাব।
ব্রতীন সরকার
চুপ
সরলরেখা ভেঙে ভেঙে বক্র হচ্ছে চোখের সামনে,
অনুজ ঝুল কালির দোহাই দিয়ে রাস্তা পেরিয়ে আসছি।
মৃত তুমি ঝরে পড়ছ বাসস্টপ পরবর্তী ট্রাফিক সিগন্যালে
শহরে শহরে
পুরোনো জামার আদলে
ধুলোর সাথে
এভাবেই
সমস্ত ব্রেকআপের ইতিহাস
নির্বিঘ্নে ভূগোল হয়ে যায়।
সায়ন্তনী নাগ
ভাঙনকথা
আমি তো সেই চিরকালের মতো
লুকিয়ে যাচ্ছি গলার কাছের ক্ষত
রক্তক্ষরণ তোমার অপচয়
মৃত্যুনিদান হাঁকল আকাশ জুড়ে
ধ্বংস এখন নিঝুম অন্তপুরে
উপড়ে যেতে আজও এত ভয়?
বারুদ গন্ধ বাতাস বইল যদি
চৌকাঠ পার আবার তো সেই নদী
নদী মানেই উথালপাথাল ঢেউ
ভাঙন যার অবসরের খেলা
ঘেন্না করে নিছক অবহেলা
ফাটল চিহ্ন দেখছ নাকি কেউ?
বিষাদ রঙা মেঘ ঘনিয়ে আসে
অথচ ভিড় নির্জনতার পাশে
ফেনিয়ে তোলে জমিয়ে রাখা কথা
শব্দ মানেই নিছক কাটাকুটি
লড়াই মাঠে তুমিও সাজাও ঘুঁটি
কথায় বাড়ে কথার অসারতা...