নাসিফ আমিনের পাঁচ কবিতা
বলাকা
বল একা; হে বলাকা তুমি
কত একা হতে হতে
উড়ে যাও
প্রণয়ের কাছে এক নিহত হৃদয়
রেখে চলে যাও
অপ্রেম নিকটে এলে তারে
নির্জনতা শেখাও, কায়ক্লেশে
পাশে বসে থেকে আমি আর
কী করি বল; তাই বড় একা একা
থেকে থেকে তোমারে ডাকিতেছি বলাকা!
মতাদর্শের দাগা
হৃদয়ের ইত্যকার কায়কারবার
আছে দলমতের নামে কেনা
মতাদর্শের দরবারে তাই আর
কোন হাহাকার করা চলিবে না
অভিমান সে তো আদিখ্যেতার
কিংবা আদর্শই যেহেতু ধর্মাবতার
তাই যে মত বলবৎ হইয়াছে
তাহার কাছে হৃদয়ের যে দেনা
হৃদয় তাহাকে কভু চিনিয়াও চিনবেন না
তাই বারবার হাহাকার করে প্লিজ
অচেনা আত্মার দোহাই পাড়িবেন না!
বল হে কমরেড, কী রাজনীতি এই হীন হাহাকারে
নমস্য মতাদর্শ বলে ছাড়িয়া গিয়াছ যাহারে
তাহারে আর কভু হৃদয় নামে ডাকিয়ো না
তাহারে আর কখনো হৃদয় দিয়া ডাকিয়ো না।
ধুর্বাল
বুদ্ধি আমারে ছাড়ি চলি গেছে জীবিকার কাছে
অতঃপর জীবিকা আমারে ডাকি একখানা বুদ্ধি দিয়াছে
বুদ্ধি ভাবিয়া বলে ধুর্বাল এ জীবনে কী আর আছে
বুদ্ধিও তাই বুদ্ধি করিয়া জীবন ছাড়িয়াছে
হায় এই জীবনের তরে আমি আর বুদ্ধি
কিংবা বুদ্ধি তরে আমার এ জীবন
আজীবন খুঁজিয়াছে শুধু বিষণ্ণ শ্রাবণ
বুদ্ধিজীবিতা তাই মোর হইল না আপন!
জ্ঞান নার্সিসাস
জ্ঞান যাকে খুন করবে বলে তাড়া করেছে
সে হতভাগা পালাবে কোথায়। জ্ঞান যদি হায়
হৃদয় হতো, প্রাণপণ তাকে
এই বুকে বরণ করা যেত।
কিন্তু কোন এক প্রেতপ্রহরে
পরাহত প্রেমিকের মতো
মুগ্ধতার অজুহাতে সে ক্রমশ ঢুকে যেতে চায়
অথচ দিকশূন্য কোন জ্ঞান ঝকঝকে ছুরির মতন
সর্বত্র ঢুকে যেতে পারে না অবলীলায়।
তারও আছে চোখলজ্জা কিংবা হৃদয়ের সামনে
মুষড়ে পড়বার ভয়। তাই তো সে
এসে দাঁড়িয়েছে পেছনে
জগৎজোড়া খ্যাতি নিয়ে
সম্মুখ দৃশ্যকে দিয়েছে পরিত্রাণ।
হৃদয়ের কাছে জ্ঞানের অন্তর্ধান
বধিরতা এনেছে কেবলি;
অন্ধতাকে দিয়েছে নিরপেক্ষতার সম্মান।
তাই মহামান্য জ্ঞান,
সমস্ত দৃশ্যের বাহিরে থেকে
এখনও কেন অন্তরে ঢুকে যেতে চান
যেন পেছন থেকে অন্তরঙ্গ বন্ধু কোন
পিঠে চুপচাপ চুপচাপ ছুরি চালান!
বিস্কুট
এই ক্ষণ চর্বিতচর্বণের
এই ক্ষণ অযাচিত বিষণ্ণতার
এই ক্ষণ একাকিনী বসে আছে
মধ্যদুপুরে; মোড়ের চায়ের দোকান
ঘনায়িত দুগ্ধমিশ্রিত কিংবা অম্লমধুর চা
আর খাইতে ইচ্ছা করতেছে না। তাই শুধু
বিস্কুট আর বিস্কুট খেতে খেতে বিস্কুট খেতে খেতে
হঠাৎ মনে হতে থাকে এই মধ্যদুপুরে একা একা বিস্কুট খাওয়া
এক মনে বিস্কুট খাওয়া চাহীন বিস্কুট খাওয়া একপ্রকার বিষণ্ণতার নাম।
বিস্কুট খেতে ইচ্ছা হলে মানুষেরে তুমি দু'চারটি বিস্কুট খেতে দিও, হে মহাকাল!