গিরীশ গৈরিকের কবিতা
মা

মা সিরিজ ৩১
চৈত্রের শেষ দুপুরে ভাগলপুর গঙ্গার তীরে
দুর্গার সাথে বিভূতিভূষণের প্রথম দেখা।
দুর্গার শীর্ণদেহ, এলোমেলো রুক্ষচুল, হাঁটু ছুঁই ছুঁই ময়লা শাড়ি
এসব দেখে বিভূতিভূষণের মাথার ভেতরে একঝাঁক শিল্পজোনাকি
আলো জ্বালালো।
তাঁর মনে হলো সদ্য সমাপ্ত উপন্যাস- পথের পাঁচালী’র অপু বড় একা
অপুর যদি দুর্গার মতো একজন দিদি থাকে, তাহলে কেমন হয়।
অতঃপর পথের পাঁচালী আবার নতুন করে শুরু হলো
অর্থাৎ অপুর দিদির জন্ম হলো, অপুর জন্মের পরে।
ঠিক এভাবে আমার মায়ের জন্ম হয়েছে- আমার জন্মের পরে
আমার মায়ের গর্ভে- আমি না জন্ম নিলে
মা- চিরজীবনের জন্য নারী থেকে যেত।
তাই আমি নারীদের গর্ভে পৃথিবীতে বারবার আসি।
মা সিরিজ ৩২
কিছু কিছু পেইন্টার আছে কালার ব্লাইন্ড
তাঁরা ব্লাইন্ড কালারের বিপরীতেও ভালো ছবি আঁকেন।
তেমনি করে আমার মা সন্তান ব্লাইন্ড
তিনি সারাজীবন ধরে- আমাদের তিন ভাইবোনের ভালোবাসার ছবি আঁকেন।
মা সিরিজ ৩৩
গভীর অন্ধকারে- একটি কেরোসিনের কুপি থেকে
আরেকটি কুপিকে আগুন ধার দিলে।
সেই কুপিদ্বয়ের দেনা-পাওনার লেনদেন সর্বসম হয়।
যেমনি করে আমার মা ও আমার ভালোবাসার লেনদেন সর্বতো সর্বসম।
তবে। ওই অন্ধকারে কুপিদ্বয়ের আলো-
একটি আরেকটি আলো থেকে অপেক্ষাকৃত বড় হলে
ছোট্ট আলোটি বড় আলোর কাছে ম্লান হয়ে যায়।
এভাবে আমি মায়ের আলোর নিচে ম্লান হয়ে থাকি
কিংবা দিনের বেলায় সূর্যালোকে চাঁদ যেমন ম্লান হয়ে থাকে।
মা সিরিজ ৩৪
মা তুমি নগ্ন হলে
তোমার সমস্ত শরীর আয়না হয়ে যায়
তখন তোমার দিকে তাকালে
শুধু আমাকেই দেখি।
এখনো শরীরের একটা বিশেষ অঙ্গ
অনেক কিছু।
তবুও আমি যখন কবিতা পাঠে নিমগ্ন থাকি
কিংবা মায়ের নান্দনিক নগ্নতা নিয়ে ভাবি
তখন আমার ওই বিশেষ অঙ্গের কথা মনে থকে না।
অথচ! এই আধুনিক সভ্যতার মানুষ কেন ভাবে না
পোশাক আবিষ্কারের পূর্বে- কোটি কোটি বছর ধরে
মা ও সন্তানরা নগ্ন হয়ে বসবাস করেছে।