আমি একাধিক বিয়ে করেছি, এতে কার কী?
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, ‘আমি একাধিক বিয়ে করেছি। শরিয়তে, ইসলামে একজন মুসলিম পুরুষকে চার-চারটি বিয়ে করার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। দেশীয় আইনেও চার বিবাহ করার প্রতি কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা বা কোনো ধরনের অনুৎসাহ নেই। কাজেই আমি যদি চারটি বিবাহ করি, তাহলে এতে কার কী? আমি একাধিক বিবাহ করেছি। এবং সেই একাধিক বিবাহ করা আমার শরিয়তসম্মত বৈধ অধিকার, সেটি আমার নাগরিক অধিকার।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে মামুনুল হক এসব কথা বলেন।
হেফাজতে ইসলামের প্রভাবশালী এই নেতা লাইভে আরও বলেন, ‘আমার একাধিক বিবাহের ওপর যদি কারও অভিযোগ বা আপত্তি থাকে, সেটা থাকবে আমার পরিবারের, সেটি থাকবে আমার স্ত্রীদের। একাধিক বিবাহ করে আমি যদি আমার স্ত্রীদেরকে কোনো অধিকারবঞ্চিত করে থাকি তাহলে তাঁরা অবশ্যই আমার বিরুদ্ধে কোথাও কোনো অভিযোগ দায়ের করতেন। কিন্তু আজও পর্যন্ত কেউ কি দেখাতে পারবেন, আমার কোনো স্ত্রী কোথাও এতটুকু অভিযোগ করেছেন যে, আমি তাদেরকে তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছি।’
মামুনুল হক আরও বলেন, ‘সুতরাং, আমার স্ত্রীদের অধিকার নিয়ে, আমার স্ত্রীদের পারস্পরিক অধিকার নিয়ে, আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক কী ধরনের হবে- কোন স্ত্রীদের সঙ্গে আমার সম্পর্কের পরিধি কতটুকু জানাব, কতটুকু পর্যন্ত জানাব না, সেটি আমার ব্যক্তিগত এখতিয়ার। আমার এই ব্যক্তিগত এখতিয়ারকে লঙ্ঘন করে যারা আমার ব্যাপারে কোনো ধরনের আক্রমণাত্মক আচরণ করেছেন, আমি মনে করি, তারা আমার ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছেন।’
গত শনিবার সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে অবস্থানের সময় মামুনুল হককে স্থানীয় লোকজন গিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় মামুনুল হক যে কক্ষে ছিলেন সেই কক্ষে একজন নারীও ছিলেন। মামুনুল হক দাবি করেন, ওই নারী তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। তাঁকে তিনি শরিয়তসম্মতভাবে বিয়ে করেছেন।
আমার ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁস করে আমার ব্যক্তিগত অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে
এরপর ওইদিন সন্ধ্যার দিকে হেফাজতে ইসলামের অনুসারী লোকজন মামুনুল হককে ওই রিসোর্ট থেকে বের করে নিয়ে যায়। এ সময় বিক্ষুব্ধরা রয়েল রিসোর্ট, স্থানীয় আওয়ামী লীগের কার্যালয়, নেতাকর্মীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে, যাতে মামুনুল হকসহ হেফাজতের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। এই ঘটনার পর বেশকিছু অডিও-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এমন একটি পরিপ্রেক্ষিতে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে মামুনুল হক আজ লাইভে আসেন। তিনি ৩২ মিনিট ৩২ সেকেন্ড বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমি কী কথা বলবো, না বলবো সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁস করে আমার ব্যক্তিগত অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে। এটি যেমন দেশের আইনেও অপরাধ, তেমনি ইসলামি বিধানেও চরম গুনাহের কাজ। সুতরাং, আমার ব্যক্তিগত ফোনালাপ যারা ফাঁস করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমি আইনি ব্যবস্থা নেব। আমার ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁস করে আমার ব্যক্তিগত অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে।’
এ সময় মামুনুল হক ‘শিশুবক্তা’ হিসেবে পরিচিতি নেত্রকোনার মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গ্রেপ্তারেরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তার করে একইভাবে চরিত্র হননের কাপুরুষিত যে পন্থা সেই পন্থাই অবলম্বন করা হয়েছে। এবং তাঁর চরিত্রের ওপর কালিমালেপনের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।’
‘পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে, যদি সেভাবেই গড়াতে থাকে তাহলে এই জনপথে কোনো সম্মানিত মানুষকে নিজের সম্মান, মর্যাদা, নিজের ব্যক্তিগত জানমাল, ইজ্জত এবং আব্রুর নিরাপত্তা নিয়ে এই জনপথে চলতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না। আমি গভীরভাবে উৎকণ্ঠিত ও উদ্বিগ্ন’, যোগ করেন হেফাজত নেতা।