প্রকাশিত সংবাদে মোংলা বন্দরের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য
‘মোংলায় বিদেশি জাহাজে ডাকাতি, আংশিক মালামাল উদ্ধার’ শিরোনামে গত ৭ আগস্ট এনটিভি অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাগেরহাটের মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব (বোর্ড ও জনসংযোগ) স্বাক্ষরিত প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ‘মোংলায় বিদেশি জাহাজে ডাকাতি, আংশিক মালামাল উদ্ধার’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি মোংলা বন্দরের গোচরীভূত হয়েছে। সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এম. ভি. ফাজা-১ জাহাজের শিপিং এজেন্ট সান সাইন শিপিং এজেন্টের প্রতিনিধি মো. সোহাগ বলেন, ‘এই ধরনের চুরির বিষয়ে আমি শুনি নাই। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জানলাম।’ পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে চুরি হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয় বলে নিশ্চিত করেন। তিনি জাহাজের ক্যাপ্টেনের বরাত দিতে জানান, বিষয়টি আদৌ সত্য নয়।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, এ বিষয়ে মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, এম ভি ফাজা-১ জাহাজের চুরির ঘটনা নিয়ে কোনো সাংবাদিক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে নাই।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, এনটিভি অনলাইনের স্থানীয় প্রতিনিধি এই ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট এবং বন্দরের সুনামহানির উদ্দেশ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। কোনোরূপ নির্ভরযোগ্য সূত্র ছাড়া বা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ না করে ভিত্তিহীন মনগড়া সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ করায় বন্দরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিকতর যাচাই-বাছাই করে আরও যত্নশীল আচরণ করার আহ্বান জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
প্রকাশিত সংবাদ সম্পর্কে স্থানীয় প্রতিবেদকের বক্তব্য : নির্ভরযোগ্য সূত্র এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেই প্রতিবেদনটি করা হয়েছে। এই প্রতিবেদকের কাছে সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্র এবং কথোপকথনের রেকর্ড আছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সুনামহানির উদ্দেশ্যে সংবাদটি করা হয়েছে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ যে দাবি করেছে তা আদৌ সত্য নয়। বরং চুরির বিষয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষের নজর নিয়ে আসতেই তথ্য প্রমাণসহ প্রতিবেদনটি করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনের আলোকে যেখানে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের মাধ্যমে চুরির ঘটনা তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত ও আটক করবে, কিন্তু সেটি না করে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ভুল আখ্যায়িত করে মূল ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মোংলা বন্দরে অবস্থানরত আরব আমিরাতের জাহাজ এম ভি ফাজা-১ থেকে মালামাল চুরির ঘটনার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। ওই জাহাজ থেকে চুরি হওয়া মালামালের মধ্যে আংশিক মালামাল পুলিশ পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধারও করেছে। স্থানীয় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও জাহাজে চুরির সত্যতা পেয়েছে। জাহাজটিতে চুরির ঘটনা উল্লেখ করে স্থানীয় শিপিং এজেন্ট সান সাইন এরই মধ্যে জাহাজ মালিককে ই-মেইলের মাধ্যমে জানিয়েছে।
জাহাজের চুরির মালামাল উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল বাহার চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে বলেছেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ পরিত্যক্ত অবস্থায় কিছু রঙের ড্রাম উদ্ধার করতে পেরেছে। সোমবারও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ওই চোরাই মালামাল উদ্ধারে অভিযান চালায়। এ ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি, আদালতকে জানাব। আদালতের মাধ্যমে এটির ফয়সালা করা হবে।’
একই বিষয়ে মোংলা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আসিফ ইকবাল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি ওসির সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি নিজেই বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। ওদের পক্ষ (জাহাজ) থেকে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ দিতে আসেনি। আমরা একটি জিডি করে রেখেছি, উদ্ধার (চুরির মালামাল) হিসেবে। কেউ যদি মামলা দিতে আসে বা অভিযোগ দিতে আসে ওদেরই, সেক্ষেত্রে আমাদের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সুযোগ থাকে। ওই জাহাজের পক্ষ থেকে কাউকে আসতে হবে। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’
চুরির ঘটনার আগে এম. ভি. ফাজা-১ জাহাজে থাকা ১৬ জন নাবিকের মধ্যে নয়জনই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে আক্রান্তদেরসহ জাহাজের নিরাপত্তা প্রহরীকে (ওয়াচম্যান) নামিয়ে আনা হয়। এ অবস্থায় জাহাজটি মূলত অরক্ষিত ছিল। জাহাজটিতে বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গত ৪ আগস্ট ওই জাহাজের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিডজি ভাজাকে কে বা কারা নামিয়ে নিয়ে যায়। এরপর ওই জাহাজের নাবিক নিখোঁজ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বন্দর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে এবং পরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, জ্যাক শিপিং লাইন্স নামের শিপিং এজেন্টের প্রতিনিধি প্রদীপ কাউকে না জানিয়ে প্রকৌশলীকে গোপনে নিয়ে যান।
এ ঘটনাকে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন মো. রফিকুল ইসলাম ‘সাংঘাতিক অপরাধ’ বলে উল্লেখ করেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে ফাজা-১ জাহাজের শিপিং এজেন্ট সান সাইন বিজনেস লিমিটেডের প্রতিনিধি মো. সোহাগ হোসেন মোংলা বন্দরের পোর্ট হেলথ কর্মকর্তা ডা. শেখ মো. মোশারফ হোসেন বরাবর আবেদন করেন। কাউকে না জানিয়ে নিয়ম বহির্ভূত বিদেশি জাহাজ থেকে প্রকৌশলীকে নামিয়ে আনার দায়ে গত ৮ আগস্ট জ্যাক শিপিং লাইন্সকে শোকজ করে পোর্ট হেলথ।
এসব ঘটনা প্রমাণ করে বিদেশি জাহাজে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এ চুরি সংগঠিত হয়েছে। ওইসব ঘটনার দায় এড়াতেই মূলত সংশ্লিষ্টদের চুরির সংবাদটিকে ভুল বলে আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।