বলরাম-সালেহাদের বাঁচার স্বপ্ন দেখায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর-জমি
ষাটোর্ধ্ব বলরাম কর্মকার। অসুস্থ স্ত্রী-ছেলেকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ভিটেমাটি বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করে পরিণত হন ভূমিহীনে। সর্বস্ব হারিয়ে হতাশ এই মানুষটি ভারতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের একটি ঘর পান। এই ঘরে তাঁর শেষ বয়সে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। ঘরের সাথে পেয়েছেন ২ শতাংশ জমি। এই জমির একটি কোনে কামারশালা স্থাপন করেছেন। এখানে দা, কাচি, বটি তৈরির মাধ্যমে লোহার কাজ করে অর্থ উপার্জন করছেন। সেই সাথে ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন করছেন। আশ্রয়ণের আঙিনায় লাউ, বেগুন, ডাটাসহ সবজির আবাদ করেছেন। পঙ্গু ছেলে জয়দেব কর্মকারকে নিয়ে তার সংসার ভালই চলছে।
বলরাম কর্মকার গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের ঊনশিয়া গ্রামের মনোরঞ্জন কর্মকারের ছেলে। বলরাম কর্মকার বলেন, আমার বাবা মনোরঞ্জন কর্মকার ঊনশিয়া গ্রামের একজন বিখ্যাত কর্মকার ছিলেন। আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই ভাল ছিল। বাবার মৃত্যুর পর আমি সংসারের হাল ধরি। আমার দোতলা টিনের ঘর ও ২ বিঘা মাঠের জমি ছিল। স্ত্রী ও ছেলে অসুস্থ হলে ঋণ করে তাদের চিকিৎসা করাই। স্ত্রী মারা যায়। ছেলে সুস্থ হয়। ঋণের দায়ে জমি, বাড়ি বিক্রি করে দেই। ভূমিহীন হয়ে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতে থাকি। ৫ ছেলের মধ্যে পঙ্গু ছেলে জয়দেব আমার সাথে রয়েছে। ৪ ছেলে বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করছে। ভিটেমাটি হারিয়ে আমি হতাশ হয়ে পড়ি। তাই ভারত যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের একটি ঘর পাই। এই ঘরে বসবাস করছি। ঘরের পাশে কামারশালা করে লোহার কাজ করছি। পঙ্গু ছেলেকে নিয়ে কাজ করে এখান থেকে সংসার চালানোর টাকা উপার্জিত হচ্ছে। এই আয় দিয়ে ৫ জনের সংসার ভালভাবে চলছে। ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন করছি। সেই সাথে আশ্রয়ণের আঙিনায় লাউ, বেগুন, ডাটাসহ সবজির চাষ করছি। আশ্রয়ণের ঘর পেয়ে আমার বেঁচে থাকার ও মাথাগোঁজার ঠাঁই পেয়েছি। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমাকে তিনি নতুন করে বাঁচার অবলম্বন করে দিয়েছেন। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আমি পূজার সময় প্রার্থনা করি। ভগবান যেন তাকে দীর্ঘজীবন দেন। তাঁর সুস্বাস্থ্য ও সাফল্য কামনা করি।
বলরাম কর্মকারের প্রতিবেশি এনায়েত বিশ্বাস ও উজ্জ্বল ফরাজী বলেন, বলরাম কর্মকার শেষ জীবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। একটি ঘর তার জীবনের গল্পকে বদলে দিয়েছে। তিনি হতাশা কাটিয়ে পৈতৃক পেশা আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার অবলম্বন পেয়েছেন। তিনি হতাশাগ্রস্ত ও বৃদ্ধদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
আগামী ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটালীপাড়া উপজেলার ১২৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে ঘরের চাবি ও দলিল হস্তান্তর করবেন।
এই ১২৯টি পরিবারের মধ্যে ঘর পাওয়া একজন কয়খা গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা সালেহা বেগম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এতদিন আমার ঘর ও জায়গা কিছুই ছিল না। অন্যের জায়গায় একটি ঝুঁপড়ি ঘর তৈরি করে থাকতাম। আগামী বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে একটি পাকা ঘর ও ২ শতাংশ জমি দিবেন। আমি খুবই আনন্দিত। আমার আর এখন অন্যের জায়গায় থাকতে হবে না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের উপজেলায় সরকারিভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের অনেক ঘর দিয়েছেন। আগামী ২২ মার্চ আরও ১২৯টি পরিবারের মাঝে ঘর বিতরণ করবেন। এছাড়াও মুজিববর্ষ উপলক্ষে জননেত্রী শেখ হাসিনা দলীয়ভাবে ২০০টি ঘর দিয়েছিলেন। সে ঘরগুলোও আমরা সঠিকভাবে ২০০টি গৃহহীন পরিবারের মাঝে বিতরণ করেছি।
উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কারণে আমরা কোটালীপাড়া উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন করতে পেরেছি। এ জন্য আমরা কোটালীপাড়াবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরেদৌস ওয়াহিদ বলেন, ‘ক’শ্রেণির ভূমিহীন ও গৃহহীন প্রতিটি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের একটি সেমিপাকা ঘর ও ২ শতাংশ জমি দিয়েছেন। ঘর বিতরণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী, অসহায়, স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবাসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মানুষকে আমরা আগ্রাধিকার দিয়েছি। তারপর ভূমিহীন ও গৃহহীন তালিকাভুক্ত সব পরিবারকেই আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দিয়েছি। ঘর পেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির এসব মানুষ সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছেন। আমরা তাদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। তাই তারা উপার্জনের সুযোগ পাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনি এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উন্নয়ন প্রতিনিধি ও অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, দেশে কোনো মানুষই ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে আমরা কোটালীপাড়া উপজেলায় ২৩৫টি ঘর বিতরণ করেছি। আগামী ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়াল প্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে আরও ১২৯টি ঘর হস্তান্তর করবেন। এর মধ্য দিয়ে কোটালীপাড়া হালনাগাদ তথ্যনুসারে ক শ্রেণির ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা হবে। তবে ভবিষ্যতে কোনো ভূমিহীন ও গৃহহীন পাওয়া গেলে তাদেরও এ প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।