বিসমিল্লাহ গ্রুপের সাতজনের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারির নির্দেশ
‘বিসমিল্লাহ গ্রুপ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খাজা সোলেমান আনোয়ার চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী গ্রুপের চেয়ারম্যান নওরীন হাবিবসহ সাত পলাতক আসামিকে ধরতে রেড অ্যালার্ট জারির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি), উপমহাব্যবস্থাপক (ডিআইজি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে পদক্ষেপ জানাতে বলেছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি এস এম সোয়েব উল কবিরের জামিন আবেদনের শুনানিকালে এই আদেশ দেন।
দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী হাসান এস এম আজিম, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না, মাহজাবিন রাব্বানী দীপা, কাজী শামসুন নাহার কনা ও ঈশিতা পারভীন। আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর অর্থ পাচার মামলায় বিসমিল্লাহ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খাজা সোলেমান আনোয়ার চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান নওরীন হাবিবসহ নয়জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। একই সঙ্গে কারাদণ্ডের পাশাপাশি আসামিদের ৩০ কোটি ৬৭ লাখ ২৩ হাজার ৩৭৩ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
দণ্ডিত অপর আসামিরা হলেন বিসমিল্লাহ গ্রুপের পরিচালক ও খাজা সোলেমানের বাবা সফিকুল আনোয়ার চৌধুরী, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আকবর আজিজ মুতাক্কি, মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবুল হোসেন চৌধুরী, ব্যবস্থাপক রিয়াজউদ্দিন আহম্মেদ, নেটওয়ার্ক ফ্রেইট সিস্টেম লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আক্তার হোসেন এবং জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা মোস্তাক আহমদ খান।
২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করে। তদন্ত শেষে নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। অভিযোগ আমলে নিয়ে ২০১৬ সালে বিচার শুরু করেন আদালত। বিচারের সময় সব আসামি পলাতক ছিলেন।
ব্যাংকিং খাতের কেলেঙ্কারির আরেক অধ্যায়ের নাম বিসমিল্লাহ গ্রুপ। প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সংস্থার বিরুদ্ধে করা ১২ মামলায় ৫৪ জনকে আসামি করে দুদক।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো মিলে মোট এক হাজার ১৭৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এর মধ্যে ফান্ডেড দায় (স্বীকৃত বিলের বিপরীতে) ৯৯০ কোটি তিন লাখ টাকা এবং ননফান্ডেড অর্থের পরিমাণ ১৮৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
বিসমিল্লাহ গ্রুপ জনতা ব্যাংকের করপোরেট শাখা থেকে ফান্ডেড ৩০৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ও ননফান্ডেড ২৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, মগবাজার শাখা থেকে ১৭৭ কোটি ১০ লাখ ফান্ডেড ও ননফান্ডেড এক কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং এলিফ্যান্ট রোড শাখা থেকে ফান্ডেড ১৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে।
এ ছাড়া প্রাইম ব্যাংক মতিঝিল শাখা থেকে ফান্ডেড ২৬৫ কোটি ৪০ লাখ ও ননফান্ডেড টাকা ৬১ কোটি আট লাখ, প্রিমিয়ার ব্যাংক মতিঝিল শাখা থেকে ফান্ডেড ২৩ কোটি ২২ লাখ ও ননফান্ডেড ৩৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা, যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের দিলকুশা শাখা থেকে ফান্ডেড ১০৮ কোটি ৪৪ লাখ ও ননফান্ডেড ৪৬ কোটি দুই লাখ টাকা এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ইস্কাটন শাখা থেকে ৯৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা ফান্ডেড ও ১০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ননফান্ডেড হিসাবে অর্থ আত্মসাৎ করেছে।
১২টি মামলার সব কটিতেই বিসমিল্লাহ গ্রুপের পরিচালক খাজা সোলেমান চৌধুরী আসামি। সাজা হওয়ার পরে আসামি এস এম শোয়েব উল কবির ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এর আগে তিনি হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়ে পলাতক ছিলেন।