মৌলভীবাজার পাহাড় ধসে নিহত শিশুদের দাফন সম্পন্ন
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/03/27/moulovibazar-pic.jpg)
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ইসলামনগর গ্রামে পাহাড় ধসে নিহত তিন শিশুর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত ১১টায় ভাটেরা শাহী ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে পাশাপাশি কবরে তাদের লাশ দাফন করা হয়।
পাহাড় ধসে তিন শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। নিহত শিশুদের বাড়ি পাশাপাশি এবং একই গ্রামে। তারা চলাফেরাও করত একসঙ্গে। এ ঘটনায় নিহত তিন শিশুর বাড়ি ও আশপাশের এলাকার মানুষ এখন শোকে কাতর।
নিহত শিশুদের জানাজায় উপস্থিত ছিলেন এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। কুলাউড়ার ভাটেরা ইউনিয়নের ইসলামনগর গ্রামের আব্দুস সালাম ও মনোয়ারা বেগমের ছেলে নাহিদ ইসলাম (১০) তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল। ওই গ্রামের তসিবুর রহমান ও রায়না বেগমের ছেলে নুরুল আমিন সুমনরা (১৩) চার ভাই ও পাঁচ বোন। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট সুমন। নাহিদ ইসলাম ও নুরুল আমিন সুমন লেখাপড়া করত পাশের সাইফুল তাহমিনা আলিম মাদ্রাসায়। একজন ষষ্ঠ শ্রেণি ও অপরজন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। একই এলাকার আব্দুল করিম ও রাবেয়া বেগমের ছেলে মো. কবির (১০) দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে ছিল দ্বিতীয়। লেখাপড়া করত পাশের ভাটেরা বদরুল-নুরুল সুন্নি মাদ্রাসার ২য় শ্রেণিতে। তাদের তিনজনের বাবা-ই দিনমজুর এবং মায়েরা গৃহিণী। ওই তিন শিশুর খেলাধুলা ও চলাফেরা ছিল এক সঙ্গে। নিজ গ্রামের রাবার বাগানের পাহাড়ের নিচে ছড়ার পাড়ঘেঁষে গর্ত থেকে তারা একসঙ্গে মাছরাঙা পাখির বাচ্চা ধরতে গেলে পাহাড় ধসের ঘটনায় মাটিচাপা পড়ে। মাটিচাপা অবস্থায় তিন শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। গ্রামের ভেতর পাশাপাশি তিন বাড়িতে শিশুদের মা-বাবা ও প্রতিবেশীদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে।
মা-বাবা আর স্বজনরা তাদের স্মৃতিচারণা করে আহাজারি ও মাতম করছে। গ্রামজুড়ে চলছে নিস্তব্দতা। প্রত্যক্ষদর্শী নিহত নুরুল আমিন সুমনের বড় ভাই রুহুল ইসলাম জানান, গতকাল দুপুর ১টার দিকে তার ভাইসহ আরও দুই শিশু একসঙ্গে বাড়ি থেকে বের হয়। বেশ কিছু সময় পাড় হলেও এদের খোঁজ মিলেনি। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর রাবার বাগানের ভেতর পাহাড়ি ছড়া দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি পাহাড় ধসে মাটিচাপা অবস্থায় হাত দেখতে পান। এ সময় তিনি চিৎকার করলে স্থানীয়রা এগিয়ে আসে। গ্রামবাসী মিলে প্রথমে মাটি সরিয়ে উদ্ধার করে নাহিদ ও কবিরকে। দ্রুত নিয়ে যায় ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। উদ্ধারকাজ শেষ হলেও তাদের সাথী সুমনের খুঁজ মিলছিল না। পরে আবার গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে মাটি খুঁড়ে ৩-৪ ফুট গভীর থেকে সুমনকে উদ্ধার করে। তাকেও নিয়ে যায় ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক তাকেও মৃত ঘোষণা করেন।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/03/27/moulovibazar-pic-in.jpg)
স্থানীয় গ্রামবাসী কামাল উদ্দিন, সাহাব উদ্দিন ও সামছু উদ্দিন জানান, ঘটনার দিন সকালে বৃষ্টি হয়েছিল। তারা কেউ বাড়িতে ছিলেন না। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিন শিশুকে উদ্ধারের পর কেউ বলেন জীবিত আবার কেউ বলেন এরা মৃত। তবুও মন মানেনি মা-বাবা ও স্বজনদের যে তাদের মৃত্যু হয়েছে। দ্রুত নিয়ে যান সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে কর্মরত চিকিৎসক তাদের কেই বেঁচে নেই জানালে স্বজনরা তিনজনের লাশ নিয়ে আসে গ্রামে। একসঙ্গে তিন শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুতে নিস্তব্দতা চলে আসে গ্রামে।
এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী মুঠোফোনে জানান, মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সন্তানহারা তিনটি পরিবারকে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে নগদ পাঁচ হাজার ও উপজেলা প্রশাসন থেকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পর্যায়ক্রমে ওই পরিবারগুলোকে দেওয়া হবে।