রাজধানী মার্কেটে পুড়েছে ১৪-১৫টি দোকান : ফায়ার সার্ভিসের ডিজি

টিকাটুলির রাজধানী সুপার মার্কেটে ১৪-১৫টি দোকান পুড়ে গেছে বলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। তবে মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা দাবি করেছে, এই সংখ্যাটি আরো বেশি হতে পারে।
আজ বুধবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে রাজধানীর ব্যস্ততম এই মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এখানে দেড় হাজারের বেশি দোকান রয়েছে। ব্যবসায়ীরা দ্রুততার সঙ্গে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। তারপর সেখান থেকে ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়। তিন ধাপে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট ঘটনাস্থেলে এসে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস।
এর আধা ঘণ্টার পর রাত পৌনে ৮টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন ঘটনাস্থলে থাকা গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, 'এখন পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে ১৪-১৫টি দোকান পুড়ে গেছে বলে আমরা ধারণা করছি। কাজ চলছে। পরে আরো বিস্তারিত জানা যাবে।'
তবে আগুন সঠিক কারণ জানাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের ডিজি। তিনি বলেন, 'গত মাসের ১০ তারিখে এই মার্কেটটিতে অগ্নিনির্বাপণের মহড়া দেওয়া হয়। তখন এখানে বেশকিছু ঘাটতি পাওয়া যায়। মার্কেট কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে এসব ঘাটতি দূর করতে দুই মাস সময় চেয়েছিলেন। এর মধ্যেই আজকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল।'
তবে আগুন নিয়ন্ত্রণের আসার পর মার্কেটের কয়েকজন ব্যবসায়ী নিজেদের দোকানের অবস্থা দেখতে ভিতরে গিয়েছিলেন। বেরিয়ে তাদের কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, আগুনে বেশকিছু দোকান পুড়ে গেছে। তবে সঠিক সংখ্যাটি তাঁরা জানাতে পারেননি। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সেই সংখ্যাটি ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিকভাবে দেওয়া সংখ্যার চেয়ে বেশি।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ৭টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইন্টেন্স) জিল্লুরুর রহমান ঘটনাস্থলে থাকা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে। তবে সম্পূর্ণ আগুন নির্বাপণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাজ করে যাব। ডাম্পিং চলছে। এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।’
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা।
এর আগে ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কর্তব্যরত কর্মকর্তা পলাশ চন্দ্র মোদক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিকেল সোয়া ৫টার দিকে টিকাটুলির রাজধানী সুপার মার্কেটে আগুনের সূত্রপাত হয়। জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯-এর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে আমাদের এখানে সংযোগ দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে যায়। আগুনের তীব্রতা বেশি থাকায় পরে আরো ১০টি ইউনিট এতে যোগ দেয়। সবশেষ সেখানে যায় আরো তিনটি ইউনিট। মোট ২৫টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।’
আজ সকাল থেকেই দোতলা এই মার্কেট খোলা ছিল। নিচতলা ও দোতলা মিলিয়ে ক্রেতাও ছিল প্রচুর। সন্ধ্যায় দিকে জমজমাট অবস্থায় হঠাৎ করেই দোতলা থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করে। তারা জানায়, দোতলায় ১৫-২০টির মতো দোকান ছাড়াও গুদাম রয়েছে। সেখানে বেডসিট, কাপড়, খেলনা ও প্লাস্টিকের দোকান রয়েছে।
তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়দের হাতে থাকা মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, আগুনের লেলিহান শিখা উপরের দিকে উঠছে। সন্ধ্যায় আকাশ ধূয়ায় কালো হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে অনেক ব্যবসায়ী বাইরে বেরিয়ে এসে কান্না ও চিৎকার শুরু করে। আগুন দেখে অনেক সাধারণ মানুষও সেখানে জড়ো হয়। খবর পেয়ে আশপাশের থানা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও সেখানে হাজির হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ সুষ্ঠুভাবে কারার জন্য সাধারণ মানুষকে মার্কেটের কাছে ভিড়তে দেওয়া হচ্ছে না। মার্কেটের নিচতলার প্রধান গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেখানে শুধু ব্যবসায়ী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ছাড়া আর কাউকে ভিড়তে দেওয়া হয়নি।
রাজধানী সুপার মার্কেট বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এখানে ছোটবড় কয়েক হাজার দোকান রয়েছে। এটি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। একতলা পাকা ভবনের উপর টিনের দোতলা এই মার্কেটের চারপাশেই রাস্তা রয়েছে। ফলে মার্কেটের চতুর্দিকে আটটি প্রবেশ পথ রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, মার্কেটের পূর্ব পাশে শার্ট-প্যান্টের দোকান, পশ্চিম পাশে খাবার, শাড়ি, হাড়ি-পাতিল, জুতার দোকান, উত্তর পাশে রয়েছে থান কাপড়ের দোকান আর দক্ষিণ পাশে জুয়েলারি ও কসমেটিকসের দোকান রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা আরো জানায়, এখানে দেশি পণ্যের পাশাপাশি থাইল্যান্ড, ভারত, জাপান, চায়না এবং পাকিস্তান থেকে আমদানিকৃত পণ্য সামগ্রীও পাওয়া যায়। বিদেশি পণ্যগুলোর মধ্যে কাপড়, স্যান্ডেল ও কসমেটিক্স সমাগ্রী রয়েছে।