শ্বশুরের বিরুদ্ধে জামাইয়ের ঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে রাতের অন্ধকারে রিকশাচালক মো. মমিনের ঘর আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। শ্বশুর বাসু মাঝির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছে মমিনের বাবা আবদুল মতিন। আজ শনিবার সকালে জীবনের নিরাপত্তা ও ঘর পোড়ানোর বিচার চেয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন।
এদিকে, পুড়ে যাওয়া ঘরটি ছাড়া মতিনের থাকার আর কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে পরিবার নিয়ে তিনি দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন। এছাড়া অভিযুক্তদের হুমকিতে তিনি পরিবার নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের কাছে নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ভুক্তভোগী আবদুল মতিন রামগতি উপজেলার চরকলাকোপা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কলাকোপা গ্রামের বাসিন্দা। ছেলে মো. মমিনসহ তিনি ফেনির দাগনভূঁইয়া এলাকায় রিকশা চালান।
অভিযোগ সূত্র জানায়, মমিনের সঙ্গে তার স্ত্রী শিল্পী বেগমের কলহ রয়েছে। এ নিয়ে মমিন তার স্ত্রীকে থাপ্পড় দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ১৭ নভেম্বর শিল্পীসহ তার বাবা বাসু মাঝি, মা হোসনেয়ারা বেগম, আত্মীয় শাহিনুর আক্তার, আবদুর রহিম ও জসিম উদ্দিন বাড়িতে এসে মমিনকে পিটিয়ে আহত করে। মমিন চিকিৎসা না নিয়েই ঘটনার দিন দাগনভূঁইয়া চলে যান। সেখানে সহকর্মীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান। পরদিন আবদুল মতিন বাড়িতে এসে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রামগতি আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর তিনি দাগনভূঁইয়া চলে যান।
মামলার বিষয়ে জানতে পেরে ২৪ নভেম্বর রাতে বাসু মাঝিসহ অভিযুক্তরা রাতের অন্ধকারে আবদুল মতিনের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এতে ঘরটি পুড়ে যায়। ছাই হয়ে যায় ঘরের আসবাবপত্র। ঘরের চালার টিনগুলো ভিটের ওপর পড়ে আছে। ঘরের বাইরে চালার সঙ্গে ঝুলানো কাঠের খোপে থাকা ৪০টি কবুতর পুড়ে মারা গেছে। তবে ঘরে কেউ না থাকায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। খবর পেয়ে বাড়িতে এসে মতিন রামগতি থানায় বাসু মাঝিসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে লিখিত আবেদন করেন।
প্রতিবেশী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘মতিনের ঘরের পাশেই আমার ঘর। অনেক চেষ্টা করেছি আগুন নেভাতে। কিন্তু সম্ভব হয়নি। অসহায় মানুষটির অনেক ক্ষতি হয়েছে। আগুন জ্বলতে দেখলেও তখন কাউকে দেখিনি।’
আবদুল মতিনের স্ত্রী আক্তারা বেগম বলেন, ‘বাসু মাঝির লোকজন আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়। এতে ভয়ে ওই রাতে আমি ঘরে ঘুমাইনি। প্রতিবেশীদের ঘরে ঘুমিয়েছি। হঠাৎ ভাঙচুরের শব্দ শোনা যায়। কিছুক্ষণ পরই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। আমার সাজানো সংসার পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’
আবদুল মতিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার একমাত্র শত্রু বেয়াই বাসু মাঝি। আমি নোয়াখালী পাটওয়ারীরহাট এলাকার বাসিন্দা ছিলাম। দুই বছর আগে আমি এ গ্রামে এসে তার (বাসু) কাছ থেকে ২০ শতাংশ জমি কিনি। এর কিছু অংশে টিনের ঘর করে বসবাস করছি। বাকি অংশ এখনও আমাকে তিনি বুঝিয়ে দেননি। এখানে আসার পর তার মেয়ের সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে দিই। ছেলে তার স্ত্রীকে একটি থাপ্পড় দেয়। এতে তারা আমার ছেলেকে মেরে গুরুতর আহত করে। এ নিয়ে মামলা করায় তারা আমার ঘর পুড়ে ছাই করে দিয়েছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
অভিযোগ অস্বীকার করে বাসু মাঝি বলেন, ‘আগুন লাগানোর ঘটনায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। শত্রুতা করে অভিযোগ এনে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
মতিনের আইনজীবী মাহমুদুল হাসান সুজন বলেন, ‘মমিনকে মারধরের ঘটনার অভিযোগটি আদালত আমলে নিয়েছেন। তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসিকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।’
রামগতি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেন বলেন, ‘আগুনের ঘটনায় লিখিত অভিযোগটি পেয়েছি। অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়ে তাদের পাইনি। ঘটনাটি তদন্ত চলছে। প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্তদের থানায় আসতে বলা হয়েছে।’