সাতক্ষীরায় বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে নতুন করে আরও পাঁচ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের মৎস্য ঘের, পুকুর, কৃষিজমিসহ মানুষের ঘরবাড়ি। ভাঙন পয়েন্টের বিস্তৃতি প্রায় ৫০০ ফুট ছাড়িয়ে গেছে।
গত শুক্রবার ভাঙন শুরু হওয়ার পর গতকাল শনিবার নতুন করে পোড়াকাটলা, পশ্চিম ও পূর্ব দুর্গাবাটী, ভামিয়া, দাতিনাখালী ও মাদিয়া এলাকার রাস্তাঘাটসহ ঘরবাড়ি, ঘের, পশুর খামার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এদিন দুপুর থেকে জোয়ারের পানি প্রবল বেগে ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে।
গ্রামবাসী বিভূতি মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের প্রায় পাঁচ হাজার কাঁকড়ার ঘের ভেসে গেছে। মানুষের বসতঘরে পানি ঢুকেছে। কাঁচা ঘর ধসে পড়ছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট এখন চরমে।’
সবিতা মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে খুব সমস্যায় পড়েছি। রান্নাবান্না করতে পারছি না। তারা ক্ষুধায় ছটফট করছে।’
অনিমেষ পাল বলেন, ‘আমাদের কাঁচা ঘরবাড়ি সব ধসে গেছে। পাকা বাড়িগুলোতেও পানি ঢুকেছে। পুকুরের পানি নষ্ট হয়ে গেছে।’
চিংড়ি চাষী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. আবুল কালাম বাবলা বলেন, ‘সাতক্ষীরা জেলার মানুষ মৎস্য চাষের ওপর নির্ভরশীল। মাছ চাষের কারণে সাতক্ষীরাবাসী সব সময় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্কে থাকে। বুড়িগোয়ালিনী নদীর প্রায় সবকটি ইউনিয়ন পানির নিচে। খোলপেটুয়া নদী ছাড়াও অন্য বাঁধগুলো অতিদ্রুত স্থায়ীভাবে সংস্কার করতে হবে। না হলে এই চিংড়ি চাষ ধ্বংস হয়ে দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের বলেন, ‘নদীর পাশের ১০০ ফিটের মতো গভীরতা ছিল। এ রকম গভীরতা থাকলে বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা থাকে। এখানেও তাই হয়েছে। এ জন্য আমরা নতুন প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছি এবং নদীর চর দূর করার চেষ্টা করছি। সাময়িকভাবে আমরা একটি রিং বাঁধ তৈরি করার কাজ আরম্ভ করতে যাচ্ছি।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘নিচ থেকে মাটি ধসে যাওয়ায় বাঁধটি ভেঙে গেছে। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের সব গ্রাম তলিয়ে গেছে। পানির বেগ বেশি বলে আমরা কাজ করতে পারছি না। পানি কমলে কাজ শুরু করা হবে।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি। খাবার সরবরাহের জন্য বলেছি। এরই মধ্যে আমরা নিরাপদ পানি সরবরাহ করছি। এ ছাড়া পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। সব সরকারি ও বেসরকারি দপ্তর সমন্বিতভাবে এখানে কাজ করছে।’