হবিগঞ্জে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
হবিগঞ্জের বানিয়াচঙ্গ উপজেলার সাতাই নদীতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। গতকাল শনিবার বিকেল ৪টায় শুরু হয়ে নৌকাবাইচ শেষ হয় সন্ধ্যায়।
সাতাই নদীর বুকে পড়ন্ত বিকেলে এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করে হাজার হাজার দর্শক। দৃষ্টিনন্দন এই নৌকা বাইচ দেখে দারুণ খুশি দর্শকরা। ভবিষ্যতে এ আয়োজন অব্যাহত রাখার কথা জানান আয়োজকরা।
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার পুকড়া ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামবাসী মনসা পূজা উপলক্ষে প্রতি বছর সাতাই নদীতে এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে। কিন্তু গত বছর করোনা মহামারির কারণে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। করোনা মহামারি পরিস্থিতি একটু ভালো হতেই এবার পূজার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। নৌকা বাইচ উপভোগ করতে সাতাই নদীর দুই পাড়ে উৎসুক হাজার হাজার দর্শক জড়ো হয়। আবার অনেকেই ছোট বড় নৌকা নিয়ে এ প্রতিযোগিতা দেখতে আসে।
এবার প্রতিযোগিতায় নয়টি বাইচের নৌকা অংশ নেয়। নৌকা বাইচের দূরত্ব ছিল প্রায় দুই কিলোমিটার। নৌকাবাইচ চলাকালে আনন্দ-উল্লাসে মুখরিত ছিল চারপাশ। বাদ্যের তালে তালে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ‘কোন মেস্তুরি নাও বানাইল, কেমন দেখা যায়। ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খীর নাও’ গানটি পরিবেশন আর নানা রঙের পোশাক পরে গ্রামবাংলার নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা ছিল উৎসব মুখর। করোনা মহামারির পর এত বিশাল আয়োজনে দর্শনার্থীদের আনন্দের কমতি ছিল না। এতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষ্যণীয়।
প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লামা পইল যুবসংঘের নৌকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে টঙ্গির ঘাটের নৌকা আর তৃতীয় স্থান অর্জন করে দৌলতপুর গ্রামের নৌকা।
প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের মধ্যে ফ্রিজ, টিভি ও মোবাইল ফোনসেট তুলে দেয় আয়োজক কমিটি। দর্শনার্থীদের দাবি, এমন আয়োজন যেন প্রতিবছর করা হয়। আয়োজক কমিটি জানায়, পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে প্রতিবছর এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।
শিবপুর নৌকা বাইচ আয়োজক কমিটির সভাপতি ডাক্তার অসিত রঞ্জন দাস বলেন, মহামারি করোনার কারণে গেল বছর নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এবার পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে গ্রামবাংলার এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে গ্রামবাসী। পরিবেশ-পরিস্থিতি ভালো থাকলে আগামীতেও এ প্রতিযোগিতার অয়োজন করা হবে।
বানিয়াচং উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাসেম বলেন, এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। এবার এলাকাবাসী মুজিব জন্মশতবর্ষতে এ আয়োজন করায় তিনি তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এ আয়োজন যেন প্রতিবছর হয়। এ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।