‘হাসপাতালে খুঁজতাছি, আমার পুতরে পাই নো’
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের পর ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের আট সদস্য রয়েছেন বলেও জানা যায়। এ ছাড়া নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আজ রোববার বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের খবর পেয়ে অনেকে স্বজনের খোঁজে আসেন। সেখানে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আবার অনেকে স্বজনের মোবাইলে ফোন দিতে থাকেন।
ডিপোতে কর্মরত পিয়ন শহিদুলের মা কান্না করতে করতে বলেন, ‘হাসপাতালে খুঁজতাছি, আমার পুতেরে পাই নো।’
ভাইকে খুঁজতে আসা একজন বলেন, ‘সকাল ৯টায় ফোন দিতেছি, তাঁর মোবাইলে কল ঢুকছে কিন্তু, ধরে না। বেঁচে আছে কি না জানি না। কিন্তু, এখনও তাঁর কোনো খবর পাই না।’
আরেকজন বলেন, ‘আমাদের ঘর তো অনেক দূরে, তারপরেও আমাদের ঘরের একপাশের টিন অনেক দূরে চলে গেছে। এভাবে সারা এলাকার প্রতিটি মানুষের ঘরের অনেক ক্ষতি হয়েছে।’
ডিপোতে রাখা গাড়ির ড্রাইভার সুমনের ভাই মমিন বলেন, ‘গাড়িতে দেখতেছি আগুন জ্বলতেছে। এরপরে উনাকে আর পাচ্ছি না আমরা। উনি ড্রাইভার।’
এদিকে, ডিপোতে কোনো পানির উৎস না থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছ, তবে এখন পর্যন্ত তা নির্বাপণ সম্ভব হয়নি। ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট কাজ করছে।
এদিকে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের সংখ্যাও বেড়ে চলছে। সেখানে সাড়ে চারশ’র বেশি আহত ব্যক্তি ভর্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম হাসান এমনটি জানিয়েছেন।
গতকার শনিবার রাত ৯টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের পর এ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ঘটনাস্থল থেকে অন্তত চার কিলোমিটার এলাকা। এ ছাড়া আশপাশের বাড়িঘরের জানালার কাঁচ ভেঙে পড়ে। কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রথমে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। রাত পৌনে ১১টার দিকে এক কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। রাসায়নিক থাকায় একটি কনটেইনারে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, স্থানীয় শ্রমিকসহ অনেকে হতাহত হন। পুড়ে যায় ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িও।
এদিকে, মানবিক কাজে সব স্বাস্থ্যকর্মী এগিয়ে এসেছেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী। এ ছাড়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতালসহ সব চিকিৎসককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও বিভাগীয় প্রশাসন।