মিয়ানমারে হামলা, ফের বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারের সীমান্ত প্রদেশ রাখাইনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় নিরাপত্তাকর্মী ও ‘সশস্ত্র সন্ত্রাসী’ নিহত হওয়ার পর সেখান থেকে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন রোহিঙ্গা মুসলিমরা।
আজ শুক্রবার মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, রাখাইন রাজ্যে দুর্গম এলাকায় সীমান্ত পোস্টে সন্ত্রাসী হামলায় ৩২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১১ নিরাপত্তাকর্মী ও ২১ 'রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী'। নিহত নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যে একজন সেনাসদস্য ও ১০ পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
এর পরই রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশের দিকে আসতে থাকে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কক্সবাজার সেক্টরের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক কর্নেল আনোয়ারুল আজিম জানান, সকাল পর্যন্ত ১৪৬ রোহিঙ্গা নাগরিককে পুশব্যাক করা হয়েছে।
‘সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে’, যোগ করেন বিজিবি কর্মকর্তা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে সন্ত্রাসীরা সংঘবদ্ধভাবে একসঙ্গে রাজ্যের ২৪টি পুলিশ পোস্টে হামলা চালায়।
হামলার ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটল, যখন মিয়ানমারের রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার নিশ্চিত করা এবং দেশটির নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা একজন রোহিঙ্গা অভিযোগ করেন, গতকাল গভীর রাত থেকে মংডুর নাইকাদং ও কোয়াংছিদং গ্রামে হামলা চালায় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। তারপরই প্রাণ বাঁচাতে অনেক রোহিঙ্গা পরিবার নাফ নদীর পাড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। কেউ কেউ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু।
এদিকে অনুপ্রবেশকালে নাফ নদীর তীরে কয়েকশ রোহিঙ্গাকে বাধা দিয়েছে বিজিবি।
গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ক্যাম্পে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য মারা যান। অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটের ঘটনা ঘটে। এর পর আবার একই ধরনের হামলার তথ্য দিল মিয়ানমার সরকার।
জাতিগত দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। জাতিগতভাবে নির্মূল করতে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের গ্রামে আগুন দিয়ে বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়াসহ গণহত্যা ও গণধর্ষণ চালায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
সহিংসতার শিকার হয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে এক পর্যন্ত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
এর আগে ২০১২ সালের জুনেও মিয়ানমারে সম্প্রদায়িক দাঙ্গায় আক্রান্ত রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। ওই সময় সরকার অনুপ্রবেশ ঠেকাতে শক্ত অবস্থান নেয়। যার ফলে ওই সময়ে সাড়ে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা পুশব্যাক করা হয়।