বাবা-হারা শিশুদের কান্নায় ভারি কুতুপালংয়ের বাতাস

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে চলছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপরে দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতন। সেখানে পুরুষদের নির্বিচারে হত্যা ও নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পালিয়ে আসা অনেক রোহিঙ্গা। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে বাবাকে হারিয়ে, মায়ের কোলে-পিঠে চড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে অনেক শিশু। তাদের হাহাকার আর কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের বালিখালী ও কুতুপালংয়ের বাতাস।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে চার নারীও রয়েছেন। গুলি করে ও গলা কেটে তাঁদের স্বামীদের হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। প্রাণ বাঁচাতে সন্তানদের নিয়ে তিনদিন ধরে উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
গতকাল শনিবার রাতেই বাংলাদেশে পৌঁছায় ওই চার পরিবার। আশ্রয় না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে মায়েদের সঙ্গে বসে আছে সন্তানরা। ওই চার নারী জানান, তাঁদের স্বামীদের হত্যা করা হয়েছে। তারা এখন আশ্রয়হীন। অবোধ শিশুদের নিয়ে কোথায় যাবেন, কী খাবেন তার কিছুই জানে না।
ওই চার নারীর একজন জানান, তাঁর স্বামীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। চার সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে এসেছেন তিনি। গতকাল রাতে এসে পৌঁছেছেন। এখনো কোথাও মাথা গোজার ঠাঁই পাননি। টাকা-পয়সাও নেই সঙ্গে। ফলে জুটছে না খাবারও।
আরেক নারী জানান, তাঁর স্বামী ও এক ছেলেকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে এখানে থাকার জায়গা নেই। এ কারণে রাস্তায় বসে আছেন তিনি।
দুধের শিশুসহ ছয় শিশুকে নিয়ে রাস্তায় বসে থাকতে দেখা যায় এমনই আরেক নারীকে। তাদের বয়স ছয় মাস, তিন বছর, পাঁচ বছর, সাত বছর, নয় বছর ও এগারো বছর। তিনি বলেন, স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা অবস্থায় আছেন তিনি। সব হারিয়ে কাদা-পানির ভেতরে খোলা আকাশের নিচে ঠাই হয়েছে তাঁর।
সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টির মধ্যে মায়ের কোলে ঘুমিয়ে আছে শিশুরা। স্বামীহারা ওই চার নারী শিশুদের নিয়ে রাস্তায় বৃষ্টিতে ভিজছেন। শিশুদের অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত। কিন্তু তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে করার কিছুই নেই। কারণ এদের মতোই হাজার হাজার শিশু প্রতিনিয়ত আসছে মিয়ানমার থেকে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যতদূর সম্ভব তারা সাহায্যের চেষ্টা করছেন। এদের মতো হাজার পরিবার রয়েছে যারা রাস্তার ধারে বসে আছে। অনেক পরিবারই পুরুষ শূন্য। তাদের শিশুদের কান্নার দৃশ্য খুবই মানবেতর। তবে স্থানীয়দের তেমন কিছুই করার নেই। কারণ রোহিঙ্গাদের চাপে তারাও বিপাকে পড়েছেন।