মিয়ানমারের তুলাতুলি গ্রাম, বর্বরোচিত গণহত্যার সাক্ষী
ইতিহাসের জঘন্যতম এবং বর্বরোচিত এক গণহত্যার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে মিয়ানমারের তুলাতুলি গ্রাম। গ্রামটির পাঁচ হাজারের মতো বাসিন্দার অর্ধেকেরও বেশি মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যাদের বেশির ভাগই পুরুষ। প্রাণে বেঁচে আসা মানুষরা এমনটাই বলছেন।
টেকনাফের একটি ক্যাম্পে আছেন ওই তুলাতুলি গ্রামের রাজা মিয়া। ২১ বছর বয়সী ছেলের খোঁজ পাচ্ছেন না তিনি। পরিবারের আট সদস্য নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। তিনি জানান, অতীতের সব ইতিহাস ছাড়িয়ে গেছে এবারের নৃশংসতা।
রাজা মিয়া বলেন, ‘অনেককে তারা ঘর থেকে ডেকে বের করে লুটপাট চালায়। আবার ঘরের ভেতরে অনেককে গুলি করে হত্যা করে। হত্যার পর আগুন দিয়ে ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অনেককে ডেকে চর এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গুলি করে এবং কুপিয়ে হত্যা করে। পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দেয়। খালের ওই পাড়ে আমার চাচার পরিবারের ১১ জনকে ঘরের ভেতর আটকে গুলি করে, ঘরে আগুন ধরিয়ে হত্যা করে।’
রাজা মিয়া আরো বলেন, ‘সঙ্গে সঙ্গেই আমরা জঙ্গলে পালিয়ে যাই। সেখান থেকে বাংলাদেশে আসি। আমার ২১ বছরের ছেলেটা নিখোঁজ। তাকে আমরা পাইনি।’
ষাট বছর বয়সী মোস্তফা খাতুন জানান, তুলাতুলি গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় প্রথমে আগুন দেওয়া হয়। পরিস্থিতির ভয়াবহতা টের পেয়ে গোটা পরিবার আশ্রয় নেয় বনে। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দেখে অনেক নির্মম মৃত্যু।
মোস্তফা খাতুন বলেন, ‘উত্তর পাড়ায় আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বনে পালিয়ে যাই। সেখান থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছি সেনাবাহিনী মানুষদের ধরে নিয়ে চর এলাকায় জড়ো করছে। বেছে বেছে যুবক ও পুরুষদের একসঙ্গে করেছে। হেলিক্পটার থেকে গুলি চালানো হয়েছে। অনেক তরুণীকে সেখান থেকে আলাদা করে কোথায় যেন নিয়ে গেছে। তাদেরকে নিয়ে কী করেছে জানি না। এমনকি অনেক শিশুকেও তারা নদীতে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। জীবনে এরকম দৃশ্য কখনো দেখিনি।’
মোস্তফা খাতুন আরো বলেন, ‘এবার কত মানুষ মারা গেছে এর সংখ্যা বলতে পারব না। তবে আমাদের গ্রামের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ তারা মেরে ফেলেছে।’
ক্যাম্পে থাকা মোহাম্মদ হোসেন দেখেছেন ১২০ বছর বয়সী মানুষকেও হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী অভিযানের একপর্যায়ে মাদ্রাসার এক হুজুরকে ধরে চরে নিয়ে যায়। হুজুরের বয়স ১২০ বছর। চরে নিয়ে গিয়ে প্রথমে তাঁকে গুলি করে। গুলি করে ফেলে দেওয়ার পর তাঁকে কোপানো হয়। এতেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। এরপর তাঁর গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এভাবে তারা অনেক মানুষ হত্যা করেছে।’