‘আইনজীবীরা রাস্তায় নামলে, পরিণতি হবে ভয়াবহ’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে অক্ষত অবস্থায় তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন। তা না হলে আইনজীবীরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবেন বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন তিনি।
খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের দক্ষিণ হল যদি একবার কেঁপে ওঠে, তবে কোনো সরকারের পক্ষেই ক্ষমতায় থাকা সম্ভব হবে না।’
নিখোঁজ সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। সুপ্রিম কোর্টের দক্ষিণ হলে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সালাহ উদ্দিন আহমেদ একজন আইনজীবী ও জনপ্রিয় নেতা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত ১০ মার্চ রাতে তাঁকে বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু তাঁকে আটকের বিষয়টি তারা অস্বীকার করে আসছে। আমরা আশা করছি, অনতিবিলম্বে অক্ষত অবস্থায় সরকার তাকে ফিরিয়ে দেবে।’
‘অন্যথায় দেশের মানুষ সরকারকে ক্ষমা করবে না’ মন্তব্য করে খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘আইনজীবীরা একবার যদি রাস্তায় নামে, সরকারের জন্য সেই পরিণতি হবে ভয়াবহ।’
সংবাদ সম্মেলনে সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘উত্তরার একটি বাসা থেকে ডিবি পরিচয়ে আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছে। এ সময় তারা বাসার সব জিনিসপত্র নিয়ে যায়। আশা করছি, সরকার আমার সন্তানের দিকে তাকিয়ে হলেও সব রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে তাকে ফিরিয়ে দেবেন।’ সালাহউদ্দিন আহমেদকে ফিরিয়ে দিতে সরকারের প্রতি আবেদন জানান তিনি।
গত ১০ মার্চ থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ। তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে তার পরিবার ও দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। তবে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আটক করা হয়নি বলে দাবি করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
সালাহ উদ্দিন আহমেদের সন্ধান চেয়ে ১১ মার্চ রাতে সাধারণ ডায়রি (জিডি) করতে গুলশান ও উত্তরা পশ্চিম থানায় যান তাঁর স্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ। তবে কোনো থানাই তাঁর জিডি গ্রহণ করেনি। ওই সময় থানা থেকে বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘উনারা (পুলিশ) বলতেছে, কোনো রিজনেবল গ্রাউন্ড (যৌক্তিক প্রেক্ষাপট) ছাড়া জিডি নিতে পারবেন না। এটা কোনো কথা হইল নাকি? আমি উনার স্ত্রী। স্বামীর সন্ধানে সারা দিন পাগলের মতো এখানে-ওখানে ঘুরতেছি। আর উনারা আমাকে এইটুকু হেল্প করবে না। উনারা আমার একটা জিডিও নেবে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’ এমনকি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার মাসুদুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই।’
এ ঘটনার পরের দিন বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ কোথায় আছেন বা তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন কি না, তা পরিষ্কার নয়। তদন্তের পরই এ বিষয়ে স্পষ্ট বলা যাবে। ওই দিন মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজে সার্ক পুলিশ অফিসার ট্রেনিং কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন, এখন পর্যন্ত আমার কাছে বিষয়টা ক্লিয়ার (পরিষ্কার) নয়। আমাদের পাশে দেখেন আইজিপি সাহেবও আছেন। তিনি এবং আমি দুজনই বলছি, বিষয়টা আমাদের কাছে ক্লিয়ার নয়। তিনি কোথায় গিয়েছেন কিংবা কেউ নিয়েছেন, বিষয়টি আমাদের কাছে এখনো ক্লিয়ার নয়। কাজেই একটু সময় লাগবে। তদন্ত করে দেখি বিষয়টা কী, জেনে নিই। তারপর আমরা জানাব।’
একই দিন বিকেলে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে কেন খুঁজে বের করা হবে না এবং আগামী রোববার তাঁকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি কামরুল ইসলাম ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
আদালতে রুলের বিরোধিতা করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘পুলিশের আইজির মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি যে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার বা আটক করেনি। রাজনীতিবিদরা নিজে পলাতক থেকে অনেক সময় রাজনৈতিকভাবে ফায়দা লোটার জন্য এ ধরনের আচরণ করে থাকেন।’
এ সময় আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করছি, তাঁকে আটক করা হয়নি। কিন্তু তিনি নিখোঁজ রয়েছেন, নাগরিক হিসেবে তাঁকে উদ্ধার করাটাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। পুলিশের এই বিষয়ে জিডি না নেওয়ার কোনো কারণ দেখি না।’ পুলিশ কেন জিডি নেয়নি সে প্রশ্ন রাখেন আদালত।
এদিকে গতকাল ১৩ মার্চ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তাঁর সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমেদের মুক্তি দাবি করেন। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করে তিন দিন পরও সরকার স্বীকার করেনি বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।
উল্লেখ্য, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ গ্রেপ্তারের পর থেকে সালাহ উদ্দিন আহমেদই দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠাচ্ছিলেন।