‘সরকারবিরোধী কথা বলছি না, মেয়ের হত্যার বিচার চাইছি’
‘আমরা তো সরকারবিরোধী কথা বলি না। আমরা আমাদের মেয়ের হত্যার বিচার চাই। খুনিদের না ধরে আমাদেরকে পাহারা দিয়ে রাখা হচ্ছে। আমরা কোথায় যাই না যাই সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। আমার বড় ছেলে ঢাকা থেকে বাড়ি আসাই বন্ধ করে দিয়েছে।’
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর মা আনোয়ারা বেগম এসব কথা বলেন।
আজ সোমবার কুমিল্লার কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে গণজাগরণ মঞ্চ আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় আনোয়ারা বেগম এসব কথা বলেন। বক্তব্যের সময় কেবলই কাঁদছিলেন তনুর মা।
প্রতিবাদ সভায় আনোয়ারা বেগম অভিযোগ করেন, তিন মাস হয়ে গেলেও তনু হত্যা মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। বরং তাঁদের পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
আনোয়ারা বেগম জানান, সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই, অভিযোগ সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে। সেনানিবাস এলাকায় তাঁর পরিবার সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, পরিবারের সবাইকে প্রতিনিয়ত নজরদারিতে রাখছেন সেনাসদস্যরা। এমনকি তনুর বাবা ইয়ার হোসেনকে কারো সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না।
তনুর মা বলেন, ‘আমরা তো সরকারবিরোধী কথা বলি না। তনুর বাবাকে, আমাদেরকে পাহারা দেওয়া হচ্ছে। যে জায়গায় তনু মারা গেল সে জায়গায় পাহারা দেওয়া হয় না, যারা মারল তাদের পাহারা দেওয়া হয় না। আমরা কোনদিকে যাই, আসি সেটা পাহারা দেওয়া হচ্ছে। যে মারল তাকে ধরার কোনো আগ্রহ নেই।’
আনোয়ারা বেগম আরো বলেন, ‘আমার বড় ছেলে ঢাকা থেকে আসাই বন্ধ করে দিয়েছে ভয়ে। আমি এখন কী করে বাঁচব।’ তিনি আরো বলেন, তনুর বাবাকে কারো সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয় না।
আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমি হত্যাকারীর বিচার চাই। আমার মেয়েকে তো ক্যান্টনমেন্টের ভেতরেই মারা হয়েছে। অন্য কোথাও তো নয়।’
তনু হত্যার বিচার ও তাঁর পরিবারের সব সদস্যের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পরেশ রঞ্জন কর, গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার মুখপাত্র আবুল কাশেম, মুক্তিযোদ্ধা মোতাহের হোসেন বাবুল, কুমিল্লার গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক খায়রুল আনাম রায়হান।
গত ২০ মার্চ সন্ধ্যায় সোহাগী জাহান তনুর লাশ কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে অলীপুর পাওয়ার হাউসের পাশের জঙ্গলে পাওয়া যায়। পরদিন তাঁর বাবা ইয়ার হোসেন কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। গত ২৭ মার্চ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ৩০ মার্চ তনুর মরদেহ উত্তোলন করার নির্দেশ দেন। ওই দিনই দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ মর্গে নেওয়া হয় এবং ডিএনএ পরীক্ষার জন্য কিছু আলামত ঢাকায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। সিআইডি গত ২৮ মার্চ থেকে মামলার তদন্ত করছে।