শতবর্ষী পাকুড়গাছের মূল্য ৫৭ হাজার টাকা!
নওগাঁর মান্দা উপজেলার মান্দা ইউনিয়নে কালবৈশাখীতে শতবর্ষী একটি পাকুড়গাছের একটি ডাল ভেঙে পড়ায় গাছটি কেটে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে স্থানীয় লোকজন এতে বাধা দিয়েছে। গাছটি রক্ষায় প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন ইউনিয়নের রাজনীতিবিদ-শিক্ষক-সমাজকর্মীরা।
উপজেলার খাগড়া সাজির মোড় থেকে কুসুম্বা পর্যন্ত জেলা পরিষদের রাস্তায় মান্দা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সামনে পাকুড়গাছটির অবস্থান।
স্থানীয় লোকজন জানান, গাছটির বয়স ১০০ বছর পার হয়েছে বহু আগে। গত সপ্তাহে কালবৈশাখীতে গাছটির একটি ডাল ভেঙে পড়ে। মান্দা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ হিল্লোল গাছটিকে ঝুঁকিপূর্ণ অভিহিত করে কেটে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহিম তা নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করার অনুমতিও দেন। এরপরই গত সোমবার নিলামের মাধ্যমে মাত্র ৫৭ হাজার টাকায় গাছটি কিনে নেন আশরাফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তখনই আশরাফুলের শ্রমিকরা গাছটির মূল অংশ কাটতে শুরু করলে স্থানীয় লোকজন বাধা দেন। একপর্যায়ে আশরাফুল স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মহসীন আলী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পাকুড়গাছটি দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সঙ্গী। অনেক উপকারী গাছ। ঝড়ে এর ডালপালা ভাঙতেই পারে। তাই বলে গাছটি কেটে ফেলার কোনো যুক্তি নেই।’
মান্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, কালের সাক্ষী গাছটি কেটে ফেলার কোনো মানে হয় না। এতে এলাকার সৌন্দর্য নষ্ট হবে।
স্থানীয় সমাজকর্মী আবদুর রউফ পিন্টু বলেন, বন বিভাগের মাধ্যমে গাছটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি।
স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গাছটির মূল্য কমপক্ষে চার লাখ টাকা। অথচ মাত্র ৫৭ হাজার টাকা দিয়ে গাছটি বিক্রির তোড়জোড় করছে প্রশাসন।
গাছটির নিলাম ডাক বন্ধের দাবি জানিয়ে নওগাঁ জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, নওগাঁ জেলা পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। এক শর বেশি ব্যক্তি ওই পত্রে স্বাক্ষর করেন।
এদিকে জেলা পরিষদ দাবি করেছে পাকুড়গাছের জায়গাটি তাদের। জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার আশরাফ আলী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এটা জেলা পরিষদের জায়গা। আর গাছ বিক্রি সংক্রান্ত ওই নিলামটি সম্পূর্ণ অবৈধ।’
ইউএনও আবদুর রহিম এনটিভি অনলাইনকে জানান, ’গাছটি ঝুঁকিপূর্ণ দেখিয়ে ইউএনও দপ্তরে আবেদন করেন স্থানীয় চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ হিন্দোল। চেয়ারম্যানের আবেদনের পর বন বিভাগকে দিয়ে সঠিক সরকারি মূল্য নির্ধারণ করে নিলাম দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রকাশ্য নিলামে ডাক কম হলে কিছুই করার নেই।’
ইউএনও জানান, গাছটি জেলা পরিষদের কি না জরিপের পরেই তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ হিন্দোল জানান, ইউএনওর অনুমতি নিয়ে এলাকায় মাইকিং করে গাছটির নিলাম দেওয়া হয়েছে।