লিচুর প্রলোভন দেখিয়ে শিশুকে ধর্ষণ, ‘ভণ্ডপীর’ গ্রেপ্তার

কুমিল্লার দেবিদ্বারে লিচুর প্রলোভন দেখিয়ে সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ‘ভণ্ডপীর’ মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন শাহ সুন্নি আল কাদেরী ওরফে মো. ইকবাল হোসাইনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গতকাল রোববার (১৮ জুন) রাজধানীর মিরপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ সোমবার রাজধানীর কারওরান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২ জুন কুমিল্লার দেবিদ্বারে সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা বাদি হয়ে দেবিদ্বার থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে আইনের আওতায় নিতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।
র্যাবের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১১ এর যৌথ অভিযানে গতকাল রাতে রাজধানীর মিরপুরে অভিযান চালিয়ে ভণ্ডপীর মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য জানিয়ে খন্দকার আল মঈন জানান, গত ২ জুন দুপুর ১২টায় শিশুটি ইকবালের বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে যায়। এ সময় তাকে লিচু দেওয়ার প্রলোভন দেখান ওই ভণ্ডপীর। পরে, তার আস্তানায় ডেকে নিয়ে কৌশলে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে শিশুটি সেখান থেকে পালিয়ে বাড়ি চলে যায় এবং মাকে সবকথা জানান। পরে, তার মা শিশুটিকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। ইকবাল এবং তার অনুসারীরা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ভুক্তভোগীর পরিবারকে ভয়ভীতি দেখায়। এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদি হয়ে মামলা করলে নিজ আস্তানা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায় ওই ভণ্ডপীর।
খন্দকার আল মঈনের দাবি, গ্রেপ্তার ইকবাল কুমিল্লার চান্দিনা এলাকার তথাকথিত একজন পীরের মুরীদ। এবং স্বনামধন্য একটি দরবার শরীফের অনুসারী ও প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে দাবি করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ নিজ বাড়িতে একটি আস্তানা গড়ে তোলে। ধর্মীয় বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকায় তিনি শুদ্ধভাবে আরবি পড়তে পারতেন না তিনি। বিভিন্ন ইসলামিক বই পড়ে ও মোবাইলে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল শুনে কিছু ধর্মীয় বিষয় মুখস্থ করে সপ্তাহে একদিন তার আস্তানায় জমজমাট আসর বসিয়ে বক্তব্য দিতেন। তার আস্তানায় আগত লোকজন মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপ করত বলে জানা যায়।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত ইকবাল কুমিল্লার একটি স্থানীয় কলেজ হতে স্নাতক সম্পন্ন করে বিভিন্ন কলেজে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকতা করতেন। স্থানীয় লোকজন তাকে প্রফেসর বলে ডাকত। একপর্যায়ে তিনি স্থায়ী কোনো চাকরি না পেয়ে সহজে টাকা উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে স্থানীয় জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে কথিত পীর হিসেবে দাবি করেন। পরবর্তীতে তিনি তার বেশভূষা ও চলাফেরায় পরিবর্তন এনে পীরের লেবাস ধারণ করে নামের শেষে শাহ সুন্নি আল কাদেরী উপাধি যুক্ত করে। ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে এলাকার স্থানীয় লোকদের বিশ্বাসকে পুঁজি করে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রতারণা করে আসছিলেন।