ছাত্রলীগ নেত্রীদের কোন প্রক্রিয়ায় বহিষ্কার করা হয়েছে, জানতে চান হাইকোর্ট
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনে জড়িত ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রীসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে গত ১৫ জুলাই এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কোন প্রক্রিয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৬ জুলাই লিখিত আকারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তা জানাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে রিটকারী আইনজীবীকেও তাদের বক্তব্য লিখিতভাবে দাখিল করতে বলেছেন আদালত।
আজ বুধবার (১৯ জুলাই) পাঁচ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ উপস্থাপনের পর বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ফুলপরীকে নির্যাতনে জড়িত পাঁচ শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের তথ্য আজ হাইকোর্টকে জানায় ইবি কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বি. এম. আব্দুর রাফেল। সঙ্গে ছিলেন মোল্লা জীবন আহমেদ।
রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসিন বলেন, ‘এ বহিষ্কার আদেশ বিধিসম্মত হয়নি। আইনগত ত্রুটি আছে।’ পরে, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বি. এম. আব্দুর রাফেল বলেন, ‘পাঁচ শিক্ষার্থীর বহিষ্কার আইন ও বিধিসম্মতভাবেই হয়েছে। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তিই দেওয়া হয়েছে।’ তবে, তাদের কোন প্রক্রিয়ায় বহিষ্কার করা হয়েছে তা লিখিতভাবে জানতে বলেছেন আদালত।
আইনজীবী গাজী মো. মহসিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী বলেছেন, যথোপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আমি বলেছি, উপযুক্ত শাস্তি হয়নি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বলা আছে, ভিসি প্রথম শাস্তি হিসেবে ৫০০ টাকা জরিমানা এবং এক বছরের জন্য বহিষ্কার করবেন। এরপর ভিসি যদি মনে করেন, শাস্তি অপরাধের তুলনায় কম হয়েছে তাহলে তিনি এটা ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে পাঠাবেন। কিন্তু, ভিসি নিজে শাস্তি না দিয়ে সরাসরি ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে পাঠিয়েছেন এবং কমিটির মাধ্যমে শাস্তি দিয়েছেন। এতে আইনের ব্যত্যয় হয়েছে।’
এই আইনজীবী বলেন, ‘ভিসি ও কর্তৃপক্ষ দলীয় বিবেচনায় বহিষ্কার করেছেন। যাতে বহিষ্কার আদেশের বিরুদ্ধে বহিষ্কৃতরা আইনের আশ্রয় নিলে আদেশটা অকার্যকর হয়ে যায়। আদালত বলেছেন, এগুলো লিখিত আকারে দিতে।’
ইবি শিক্ষার্থী ফুলপরীকে নির্যাতনে জড়িত ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রী সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে গত ১৫ জুলাই এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে ইবি প্রশাসন। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় জানানো হয়, বহিষ্কৃতরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষাসহ কোনো কিছুতেই অংশ নিতে পারবেন না।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরা (সেশন : ২০১৭-১৮), চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি (সেশন : ২০২০-২১), আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম (সেশন : ২০২০-২১), ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম (সেশন : ২০২০-২১) ও একই বিভাগের একই সেশনের মুয়াবিয়া জাহান। এর মধ্যে সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। অন্যরা ছাত্রলীগের কর্মী। নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচজনকেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ফুলপরী নামের এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও আপত্তিকর ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগনেত্রী ও পরিসংখ্যান বিভাগের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মির বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, উচ্চ আদালত এবং ছাত্রলীগের পৃথক চারটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত শেষে প্রতিবেদনের আলোকে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে হাইকোর্টের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওই পাঁচ অভিযুক্তকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া হল প্রশাসন ও ছাত্রলীগ তাদের তদন্তের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বহিষ্কার করে।