কালবৈশাখীর আঘাতে বরিশাল বিভাগে নিহত ৭
বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রাঘাতে সাতজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পটুয়াখালী জেলার বাউফলে দুইজন, পিরোজপুরে দুইজন ও ঝালকাঠিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আজ রোববার (৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কালবৈশাখী শুরু হয় পিরোজপুরে। প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টিতে মুহূর্তে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় জেলার বিভিন্ন উপজেলা। কালবৈশাখীর আঘাতে পিরোজপুরে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে গাছচাপায় রুবি বেগম (২৩) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। নিহত রুবি বেগম পিরোজপুর পৌরসভার হুলারহাট এলাকার মিরাজ সরদারের স্ত্রী। একই উপজেলার শারিকতলা ডুমুরিতলা ইউনিয়নের রানিপুর গ্রামের একটি খাল থেকে অনিল পাল (৮৩) নামে এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
শারিকতলা ডুমুরিতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজমির হোসেন মাঝি বলেন, ঝড়ে নিহত অনিল পাল ওই গ্রামের মৃত কানাই লাল পালের ছেলে। সকালে ঘর থেকে বের হয়ে বৈশাখী তাণ্ডবের মধ্যে পড়েন। ধারণা করছি, দমকা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে পাশের নলবুনিয়া খালে ফেলে দেয়। ঝড় শেষে পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজাখুঁজি করে দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে ওই খাল থেকে মরদেহ উদ্ধার করেছে।
পিরোজপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, আকস্মিক ঝড়ে গাছপালা উপড়ে পড়ে পিরোজপুর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের জন্য শুকনো খাবার ও ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিহতের পরিবারকে সরকারের তরফ থেকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে। ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ নিরূপণ করে পরে জানানো হবে।
ঝড়ে গাছের নিচে চাপা পরে ওই নারীর মৃত্যু হয় জানিয়ে পিরোজপুর সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক রমজান আলী বলেন, ঝড়ের পরে রুবি বেগম নামে এক নারীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। মেহজাবীন নামে ওই নারীর মেয়ে আহত হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঝড়ে এখন পর্যন্ত ১২ থেকে ১৩ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছ। এদিকে ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলার শেখেরহাট, পোনাবালিয়া ইউনিয়ন এবং কাঁঠালিয়া উপজেলার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নে ঝড়ের সময়ে মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে দুই নারী ও এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতরা হলেন কাঁঠালিয়া উপজেলার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের মুন্সিরাবাদ গাজীবাড়ি এলাকার মৃত আলম গাজীর স্ত্রী হেলেনা বেগম, সদর উপজেলার শেখেরহাট এলাকার ফারুক হোসেনের স্ত্রী মিনারা বেগম ও পোনাবালিয়া এলাকার মো. বাচ্চুর মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মাহিয়া আক্তার ঈশান। বেলা ১১টার দিকে ঝড় শুরু হয়ে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল বলেন, ঝালকাঠিতে ঝড়ের সময় মাঠে গরু আনতে গিয়ে দুই উপজেলায় এক শিশু ও দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা করা হবে।
পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলায় সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত চলা ঝড়ে রাতুল (১৪) নামের এক কিশোর ও সুফিয়া বেগম (৮৫) নামের এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন। নিহত রাতুল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রায় তাঁতের কাঠি গ্রামের জহির সিকদারের ছেলে। তাকে রাস্তায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে বজ্রাঘাতে সে মারা গেছে। আর সুফিয়া বেগম দাশপাড়া ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের মৃত আহম্মেদ প্যাদার স্ত্রী। ঘরের ওপর গাছ পড়ে তিনি মারা যান।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মারজান বলেন, রাতুলকে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই সে মারা গেছে। তার শরীরে বজ্রপাতে ঝলসানোর কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে বজ্রপাতের শব্দে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যেতে পারে।
দাশপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে সুফিয়া বেগম মারা যান। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় গাছ পরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেগুলো কেটে সরানো হচ্ছে। পুরো এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
বরিশাল বিভাগীয় আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ বশির আহম্মেদ বলেন, বিভাগের উপকূলীয় এলাকা পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও বরগুনার ওপর দিয়ে কাল বৈশাখী বয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত বরিশাল জেলায় রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি। তবে পটুয়াখালী, বরগুনা ও পিরোজপুরে বৃষ্টি ও বাতাসের গতি অস্বাভাবিক ছিল। আমরা সেই রিপোর্ট এখনো পাইনি।
অপরদিকে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া আবহাওয়া অফিসের সাথে যোগাযোগ করে তাদের পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, ঝড়ে বিভিন্ন এলাকায় বৈদ্যুতিক তারের ওপর গাছ পরে লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এজন্য পিরোজপুর ও বরগুনার তথ্য অফিসের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিভাগের ৪২টি উপজেলার মধ্যে ৩০টিরও বেশি উপজেলায় কাল বৈশাখীর আঘাত হানে। এসব এলাকায় শতাধিক সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আর ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার।