টিকিট ছাড়া পার্কে ৫ শিশু, কান ধরিয়ে রাখলেন ইউএনও!
পার্কে টিকেট ছাড়া ঢুকেছিল পাঁচ শিশু। এতে শাস্তি পেতে হয়েছে তাদের। কান ধরিয়ে দীর্ঘ সময় রাখা হয় আটকে। এমন অভিযোগের পাশাপাশি ভিডিওতেও দেখা যায় সেই দৃশ্য। এমন কাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযোগের তীর শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিনের দিকে। যদিও তিনি তা অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, শিশুদের কাউন্সিলিং করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভুক্তভোগী শিশুদের পরিবার ও সচেতন মহল। তাদের দাবি, শিশুরা অন্যায় করলেও তাদের অভিভাবকদের ডেকে বিষয়টি সমাধান করা যেত।
ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (১৫এপ্রিল) সন্ধ্যায় পৌরসভার শিল্পকলা একাডেমির মাঠ এলাকায় জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রিত শরীয়তপুর পার্কে। ভিডিওতে দেখা যায়, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিন শিশুদেরকে দাঁড় করিয়ে শাস্তি দিচ্ছেন। এরমধ্যে কয়েকজন শিশু কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা আনসার সদস্যদের পাহারায় তাদেরকে দাঁড় করিয়ে রাখেন অন্তত তিন থেকে চার ঘণ্টা। তাদেরকে নির্দর্শনা দেন, রাত সাড়ে ৯টার পরে পার্ক বন্ধ হলেই তাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর পার্কটি ঈদের দিন চালু করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পার্কের দেখভালের দায়িত্বে আছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিন। সীমানা প্রাচীর দিয়ে পার্কটির চারপাশ আটকে একটি প্রবেশ দ্বার রাখা হয়েছে। পার্কের ভেতরে শিশুদের খেলার জন্য বসানো হয়েছে ১৫ থেকে ১৬টি রাইড। এ ছাড়া পার্কে প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় পৌর এলাকার হাতিরকান্দি, তুলাসার ও স্বর্ণঘোষ এলাকার ১০ থেকে ১৩ বছর বয়সী কয়েকজন শিশু পার্কের আশেপাশে খেলাধুলা করছিল। এ সময় তারা নিরাপত্তা প্রহরীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমানা প্রাচীর টপকে পার্কে প্রবেশ করে। বিষয়টি দেখতে পেয়ে গ্রাম পুলিশ ও আনসার সদস্যরা তাদের মধ্যে পাঁচ জনকে আটক করেন। পরে সেখানে উপস্থিত হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মাইনউদ্দিন ওই শিশুদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখেন।
যখন এমন ঘটনা চলছিল, তখন পার্কে উপস্থিত অনেক দর্শনার্থী মুঠোফোনের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলেন ও ভিডিও ধারণ করেন। এতে খুবই লজ্জাবোধ করেন ওই শিশুরা। শিশুদের দাবি, তাদের কাছে টাকা ছিল না, তাই অনেকের দেখাদেখি টিকিট না কেটেই পার্কে প্রবেশ করে। তারা বারবার ক্ষমা চেয়েও পায়নি। দীর্ঘ সময় কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।
ভুক্তভোগী এক শিশুর অভিভাবক বলেন, ‘আমার পোলার কাছে টাকা ছিল না। টাকা না থাকায় ওরা কয়েকজন মিলে পার্কের দেয়ালে বসে দেখতেছিল। একসময় ওরা পার্কে ঢুকে যায়। পরে আনসার আর ইউএনও স্যার ওদের দুই থেকে তিন ঘণ্টা কানে ধরে দাঁড় করিয়ে রাখেন। আমাদের বললে আমরা ওদের বিচার করতে পারতাম, কিন্তু ওদের এভাবে বিচার করাটা অন্যায় হয়েছে বলে আমরা মনে করছি।’
অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, পার্কটি যেহেতু শিশুদের জন্য করা হয়েছে, ভুলত্রুটি শিশুরাই করবে। আর যারা দেয়াল টপকে পার্কের ভেতরে প্রবেশ করেছে, নিশ্চয়ই ওরা অন্যায় করেছে। তবে, এটা যে অন্যায়, সেটা বোঝার বয়স ওদের হলে এটা ওরা করত না। তাই বলে ওদের অপরাধের শাস্তি এত নির্মম হতে পারে না।’
অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিন বলেন, প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শরীয়তপুর পার্কে প্রবেশ করছে অন্তত এক হাজার ৫০০ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। তিনি আরও বলেন, কয়েকজন দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকলে গ্রাম পুলিশ ও দায়িত্বরত যারা ছিলেন তারা ওদেরকে ধরে আটকে রাখে। আমি গিয়ে কাউন্সিলিং করে ছেড়ে দেই। শিশুদের কান ছেড়ে দেওয়ার কথা বললেও দুই একজন হয়তো ভয়ে কানে হাত দিয়েছিল। তাদের কান ছাড়তে বলার পরও না শুনে থাকলে আমাদের দোষারোপ করা যেতে পারে না।