নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় যুবক নিহত, প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ
গোপালগঞ্জে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে যুবক নিহতের প্রতিবাদে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল এবং গাছ ফেলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেছে এলাকাবাসী। আজ বুধবার (১৫ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে সদর উপজেলার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
মিছিলে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে গুলিতে নিহতের লাশ নিয়ে পৌনে ১টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের শহরতলীর চেচানিয়াকান্দি এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং আগুন জ্বেলে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষোভকারীরা নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান ভূঁইয়া লুটুল এবং হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন নিহত ওয়াসিকুর ভুঁইয়ার বোন লাভলী বেগম, ছাত্রলীগনেতা সাজ্জাদ মোল্লা, কাজী নাদিম হোসেন, শামীম মোল্লা, সোহেল মোল্লা, জুবায়ের আহমেদ সজিব প্রমুখ। এ সময় মহাসড়কের উভয় পাশে আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রী সাধারণ। পরে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম ও পুলিশ সুপার আল-বেলী আফিফার আশ্বাসে দুপুর ২টার দিকে অবরোধ তুলে নেয় বিক্ষোভকারীরা।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে চা সিগারেট পান করা নিয়ে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে সদর উপজেলার সদ্যবিজয়ী চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান ভুইয়া লুটুলের সমর্থক চয়ন ভূঁইয়া এবং পরাজিত প্রার্থী বি এম লিয়াকত আলীর সমর্থক সবেদ আলী ভূঁইয়ার লোকজনের মধ্যে চন্দ্রদিঘলিয়া বাজারে সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় ওয়সিকুর ভুইয়া নামে এক যুবক এবং চারজন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় কমপক্ষে ১৫ জন।
পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলিমুজ্জামান বিটু বলেন, ৮ তারিখে সদর উপজেলায় যে নির্বাচন হয়েছে এই নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি, ক্ষমতার দাপট এবং অস্ত্রের মুখে জনগণের ভোটাধিকারকে বাদ দিয়ে যে ভোটে নির্বাচিত হয়নি তাকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। গোপালগঞ্জবাসী তখন থেকেই এই রেজাল্টকে প্রত্যাখ্যান করেছে। গোপালগঞ্জের এই শান্ত পথকে অশান্ত করার লক্ষ্যে মঙ্গলবার সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়ায় অস্ত্রধারীদের দিয়ে একজনকে গুলি করে হত্যা করেছে। এর মাধ্যমে গোপালগঞ্জবাসীকে জানান দিতে চেয়েছে তারা ৮ তারিখে যে অবৈধ ফলাফল দিয়েছে, নির্বাচনের সেই ফলাফল যেন সবাই মেনে নেয়। এই রেজাল্ট নিয়ে যেন কেউ কথা না বলে।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আল-আমিন ইসলাম বলেন, আমার এই ৩৬ বছরের জীবনে কোনদিন দেখি নাই গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কোন খুন হয়েছে। কারণ আমাদের জননেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম ভাই যতদিন এমপি হয়েছেন গোপালগঞ্জে এমন কোন কিছু হয়নি। গোপালগঞ্জে ইদানিং কিছু মানুষ, কিছু ক্ষমতাশালী লোক, কুচক্রীমহল তাদের ক্ষমতার সর্বোচ্চ অপব্যবহার করছে। তারা পোলাপানের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে। গোপালগঞ্জের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমরা এর সঠিক তদন্ত চাই এবং আইনের মাধ্যমে তাদের শাস্তি চাই ও বিচার চাই।
সদর উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত আওয়ামী লীগ নেতা ও চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএম লিয়াকত আলী বলেন, ৮ তারিখ চক্রান্ত করে নির্বাচনে অবৈধ ফলাফল ঘোষণা করা হলো। যা গোপালগঞ্জবাসী সবাই জানে। এই অবৈধ ফলাফল ঘোষণা করে আমাকে পরাজিত ঘোষণা করা হলো। এতে দুঃখ নাই আমার। আমি সাংবাদিক সম্মেলন করতে চেয়েছি, আমি অবরোধ করতে চেয়েছি, আমি প্রতিবাদ করতে চেয়েছি। কিন্তু আমার নেতা জননেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম শান্তিপ্রিয় নেতা গোপালগঞ্জে কোন অঘটন ঘটুক তিনি সেটা চান না। তিনি আমাকে ডেকে নিয়ে এবং ফোনে প্রথম বলেছেন তুমি জিতেছো, তুমি ধৈর্য ধরো, আমি এমপি আছি। কাজেই আমি তোমাকে দেখবো। তুমি এ বিষয় নিয়ে গোপালগঞ্জে কোন অরাজকতার সৃষ্টি হোক এমন কোন কাজ করো না। এটা আমার নির্দেশ তোমার প্রতি। আজকে শেখ সেলিম আমাকে ফোনে বলেছে তুমি একটা কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে মিটিং শেষ করে দাও। জনগণকে কোন ক্ষতিগ্রস্ত করো না। সেভাবে তার নির্দেশ পেয়ে আমি আপনাদের কাছে বলতেছি আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার মধ্যে যদি কোন আসামি ধরা না হয় তাহলে বৃহস্পতিবার ১১টার সময় সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়ায় মহাসড়ক অবরোধ করা হবে। এর পরবর্তী কর্মসূচি সেখানে জানিয়ে দেওয়া হবে।
গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার আল বেলী আফিফা বলেন, মঙ্গলবার সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়ায় যে ঘটনাটি ঘটেছে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ আমরা পাইনি। আমরা যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া, যারা এটার সাথে জড়িত এবং এটার পিছনে যারা আছে সবাইকে ধরার জন্য প্রস্তুত আছি এবং কাজ করে যাচ্ছি।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, প্রথম ধাপে গোপালগঞ্জের তিনটি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুন্দর সুষ্ঠুভাবে সকলের উপস্থিতিতে এবং স্বচ্ছ ভাবেই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রশ্নের কিছু নেই। কারণ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ফলাফল সঠিকভাবে হয়েছে। মঙ্গলবার একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে তার জন্য আমরা শোকাহত। আমরা শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র্যাব, আনসার মোতায়েন রয়েছে। অবরোধকারীদের সাথে কথা হয়েছে। তাদের আমরা আশ্বস্ত করেছি, যারা দোষী তাদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। আর মঙ্গলবারের ঘটনায় অবৈধ অস্ত্র যদি ব্যবহার হয়ে থাকে, তাহলে সেগুলো উদ্ধারের জন্য অভিযান অব্যাহত থাকবে।