চট্টগ্রামে পানিতে ডুবে দুই মাসে ১৬ শিশুর মৃত্যু
চট্টগ্রামে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। প্রতি বছরই এই ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘতর হলেও এ হার কমিয়ে আনতে কোনো উদ্যোগ নেই, নেই কোনো পদক্ষেপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিভাবকরা সচেতন না হলে এই হার কমিয়ে আনা সম্ভব নয়।
গত দুই মাসে চট্টগ্রামে শুধু পানিতে ডুবে ১৬ জন মারা গেছে। জানা যায়, ৩ জুন সোমবার বাঁশখালীতে পুকুরে মাছ ধরতে নেমে পানিতে ডুবে মারা যায় শেখেরখিল উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী তামজিদ হোসেন (১১)। ৩১ মে শুক্রবার সাতকানিয়ার ছদাহা ইউনিয়নের তোহা মিয়া নামে ১৪ বছরের এক শিশু পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায়। ২৬ মে সকালে আনোয়ারা উপজেলার বরুমচড়া ইউনিয়নের সিকদারের বাড়ির পুকুরের পানিতে ডুবে মো. ইমন (৯) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। ২৪ মে হাটহাজারী উপজেলায় পৃথক স্থানে পুকুরের পানিতে ডুবে মো. নওশাদ (১১) ও তাজবীদ (২) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। একই দিন রাঙ্গুনিয়ায় পুকুরে ডুবে মারা যায় মো. আয়ান (৪) নামের এক শিশু।
২২ মে বাঁশখালীর পৃথক স্থানে পুকুরে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া শিশুরা হলো উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আল মামুন ফয়সালের মেয়ে রোমাইসা জান্নাত (২) ও বাঁশখালী পৌরসভার উত্তর জলদী ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নেয়াজর পাড়া এলাকার আবু হামিদের ছেলে মেহাম্মদ আবির (২)। ১৮মে রাঙ্গুনিয়ায় পুকুরে ডুবে মুহাম্মদ শাওন (৮) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। শাওন ইসলামপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সাহেবনগর এলাকার শাহ ছুফি আব্দুল কাদের (রহ.) দাখিল মাদরাসার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। ২৮ এপ্রিল আনোয়ারায় পুকুরের পানিতে ডুবে মোহাম্মদ রায়হান (৩) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়।
২২ এপ্রিল চন্দনাইশে পুকুরে ডুবে নুসরাত জাহান ফারিয়া মিম্পা (৭) ও জান্নাতুল মাওয়া (৯) নামে দুই শিশু মৃত্যু হয়। ১৪ এপ্রিল ইপিজেড এলাকায় পানিতে ডুবে মো. সামিদুল নামের ৯ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়। ৫ এপ্রিল বাঁশখালীর শীলকূপ ও সরল ইউনিয়নে পুকুরের পানিতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু হয়। তারা হলো- শীলকূপ ইউনিয়নের মাইজপাড়ার আবু ছালেকের মেয়ে ওয়াজিফা বেগম (৬), রিয়াজ উদ্দিনের মেয়ে মারিয়া আক্তার (৫) এবং সরল ইউনিয়নের মিনজিরিতালা গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে তাহরিন বেগম (৬)।
পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করা চট্টগ্রামের আইনজীবী বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব এ এম জিয়া হাবিব আহসান বলেন, ‘আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার বেশি হলেও পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনাও কম নয়। পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে প্রথমত প্রাতিষ্ঠানিক নজরদারি প্রয়োজন। সকাল নয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত ডুবে মৃত্যুর ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে। ওই সময়ে মায়েরা কাজে ব্যস্থ থাকেন। তখন তারা শিশুদের তদারকিতে না থাকার কারণে পানিতে ডুবে মৃত্যু হচ্ছে বেশি। তাই শিশুদের নজরদারিতে রাখতেই হবে।
এ এম জিয়া হাবিব আহসান বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে শিশু বয়স থেকেই সাঁতার শেখানো হলেও বাংলাদেশে এই পদক্ষেপ রাষ্ট্রীয় কিংবা সামাজিকভাবে নেওয়া হয়না। ফলে সাঁতার না জানার কারণেও পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে।
নানার বাড়ি, খালার বাড়ি, ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে কিংবা কোনো উৎসবে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পুকুরে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা বেশি। এ ক্ষেত্রে কোথাও বেড়াতে গেলে নিজ সস্তানদের প্রতি অভিভাবকদের নজর রাখতে হবে। তাহলেই পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার কমিয়ে আসতে পারে বলেও জানান তিনি।