দর্শনার্থীদের ভিড়ে কুমিল্লায় ত্রাণ কার্যক্রম ব্যহত

কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলায় বন্যাদুর্গত এলাকায় উৎসুক জনতার ভিড়ে আটকে পড়াদের উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। বিশেষ করে মোটরসাইকেলে করে দলবেঁধে তরুণ ও যুবক বন্যাদুর্গত এলাকায় যানজট সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় যেখানে নদী ভাঙছে, সেখানেও ভিড় করে টিকটক ও রিলস ভিডিও বানাচ্ছে অনেকে।
আজ শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১টায় কুমিল্লা বুড়িচং সড়কের কালখড়পাড়, ভরাসার, ইছাপুরা ও মহিষমারা এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে উৎসুক জনতার ভিড়। তাদের কেউ এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে, কেউ বা এসেছে পরিবার নিয়ে। বুড়বুড়িয়া এলাকার যেখানে গোমতীর বেড়িবাঁধ ভেঙেছে, সেখানে হাজারও মানুষ ছবি তুলছে, ভিডিও করছে, রিলস এবং টিকটিক করছে। তাদের চাপে ভেঙে যাওয়া বাঁধ আরও প্রশস্ত হচ্ছে। তাদের বাহনের চাপে ত্রাণ নিয়ে আসা ট্রাক-পিকআপকে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান জানান, তারা শুক্রবার থেকে কুমিল্লার বুড়িচংয়ে আছেন। প্রতিদিন উদ্ধার তৎপরতা এবং ত্রাণ বিতরণ করছেন। মহিষমারা এলাকায় দর্শনার্থীদের কারণে তাদের নৌকা ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না।
আরেক স্বেচ্ছাসেবী মঞ্জুরুল আলম বলেন, তিন দিন ধরে কুমিল্লার বুড়িচংয়ে প্রচুর মানুষ আসছে। তাদের কারণে বন্যাদুর্গত এলাকায় কাজ করা যাচ্ছে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, বন্যা দেখতে আসা মানুষজনের বিবেক বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। তাদের কারণে সময়ের কাজটা সময়ে করা যাচ্ছে না।
বুড়বুড়িয়া এলাকার বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া জানান, তাঁর বাড়ি বুড়বুড়িয়াতে। যেখানে নদী ভাঙছে, সেখানেই। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী আসছে।
এদিকে, বাকশীমূল এলাকায় গিয়ে দেখা যায় শতাধিক মোটরবাইক। এসব বাইকে করে শহর থেকে যুবকরা এসেছেন বন্যার পানি দেখতে। তাদের মোটরবাইকের কারণে যারা আশ্রয়ের খোঁজে বাড়ি ছেড়েছেন তাদের ভেতর ভয় ও শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
কুমিল্লা নগরীর ইপিজেড এলাকা থেকে আবু সোহেল ও সোলাইমান হোসেন বাইক নিয়ে বাকশীমূল এলাকায় বন্যার পানি দেখতে যান। তাদের মতে, ওই এলাকায় এক থেকে দেড়শ মোটরবাইক প্রবেশ করেছে। বাইকের আওয়াজে বন্যাক্রান্ত এলাকার সাধারণ মানুষও ভীত-সন্ত্রস্ত।
এসব কারণে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাহিদা আক্তার নিজেও অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘কতবার ডাক দেওয়া যায়। উৎসুক মানুষের কারণে উপজেলা প্রশাসনের কাজ করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। যারা ত্রাণ দিতে আসবেন, তাঁরা যেন নৌকার ব্যবস্থা করে আসেন। তাহলে একদম দুর্গম এলাকায় পৌঁছে ত্রাণ দেওয়া সম্ভব হবে।’