বন্যার পানির তোড়ে মাটির ঘর মাটিতেই মিশে ধীরেন্দ্রর
বন্যার পানির তোড়ে মাটির ঘর মাটিতেই মিশে গেছে। ১০ দিন পর পানি সরে গেছে। তাই ভিটেমাটির ধ্বংসস্তূপে বসে কিছু খোঁজছিলেন সত্তরোর্ধ্ব ধীরেন্দ্র চন্দ্র দাস। এক সময় ধ্বংসস্তূপের ভেতর খুঁজে পান নাতনির জন্য কেনা ঝুনঝুনি আর কয়েকটা খেলনা।
ধীরেন্দ্র চন্দ্র দাস কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ইন্দ্রাবতী গ্রামের বাসিন্দা। গোমতীর নদীর বাঁধ ভেঙে তাঁর বাড়িটি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এক ছেলে দুই মেয়ের জনক তিনি। মেয়ে দুটিকে বিয়ে দিয়েছেন। বছরখানেক আগে তাঁর স্ত্রী মারা গেছেন। ছেলের বউ আর দুই নাতনি নিয়ে তাঁর পরিবার। ছেলে বিশ্বজিৎ চন্দ্র দাস ওমান থাকেন। তাঁর ভিসার মেয়াদ নেই। তাই সেখানে লুকিয়ে থাকেন তিনি। পরিবারের দুর্দিনে টাকা দিতে না পারেন না।
আজ সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বুড়িচং উপজেলার ইন্দ্রাবতী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ধীরেন্দ্র চন্দ্র সাহার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এই চিত্র। ওই গ্রামে আরও অন্তত ১২টি মাটির ঘর বন্যার পানিতে মিশে গেছে। ঘরহারা মানুষগুলো এখন প্রতিবেশীদের ঘরেই থাকেন। ধীরেন্দ্রও ছেলের বউ দুই নাতনিকে নিয়ে প্রতিবেশীর বাড়িতে থাকেন। ঘর তৈরি না করা পর্যন্ত প্রতিবেশীর বাড়িতেই থাকতে হবে।
ইন্দ্রাবতী গ্রামে নদীর বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে এখনও পানি বয়ে যাচ্ছে ধানী জমিতে। সড়কের কোথাও কোথাও পানি জমে আছে। সড়কগুলো ভেঙে গেছে। হেঁটে গন্তব্যে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।
ধীরেন্দ্র বলেন, ‘১৩ তারিখ রাউতকা গাঙ ভাইঙ্গা যায়। ভাঙ্গন এর খবর পাইয়া পুতের বউ আর নাতনিডিরে লইয়া উঠছি আরেক বাইত (বাড়িতে)। পরের দিন আমার ঘরটা দুরুম কইরা ভাইঙ্গা পড়ে। সাত-আট দিন পানি আছিল । ঘরের মাল-সামাল বের করছি পরে। কিন্তু ঘর বাঁচাইতে পারলাম না। কষ্ট কইরা ঘরটা বানাইছিলাম। অহন কিতা করি। ক্যামনে ঘরটা বানাই। আমার পুত বিদেশ আছে। তারও ভিসা নাই। পলাইয়া থাহে। পুতেরও কামাই নাই, ঘরটাও ভাইঙ্গা গেল। অহন আমি পুতের বউ আর দুইডা নাতি লইয়া কই থাহি। আমারে যদি সরকার একটা ঘরের টাকা না দেয় তাইলে আমি এই মেঘবানের ভিতরে ক্যামনে থাইক্কায়াম।’
ধীরেন্দ্রর ছেলের বউ সীমা রানী দাস জানান, যেদিন নদীর বাঁধ ভেঙে যায় তারপর আর শ্বশুড়ের ভিটায় আসেননি। পরে এসে দেখেন পুরো ঘরটা ধ্বংস হয়ে গেছে।
সীমা রানী বলেন, ‘দুইটা ছোট বাচ্চা নিয়ে অন্যের ঘরে থাকা সত্যি অনেক কষ্টের। সরকারি সহায়তা ছাড়া এখন আমাদের আর কোনো উপায় নাই। ঘর তৈরি করার সাধ্য নাই।’
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরের তালিকা হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি সংস্কার কিংবা নির্মাণ করে দেওয়ার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয় তা শিগগিরই জানিয়ে দেওয়া হবে।