কেরানীগঞ্জের মোড়ে মোড়ে অবৈধ ব্যাটারি চার্জিং গ্যারেজ
ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার হযরতপুর থেকে কোন্ডা ইউনিয়ন পর্যন্ত উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও মহল্লায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ব্যাটারি চার্জিং গ্যারেজ। আইনের তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র গড়ে ওঠা এই ব্যাটারি চার্জিং গ্যারেজগুলো থেকে গ্যারেজ মালিকরা বছরে আয় করছেন কোটি কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগ ও প্রশাসনের লোকদের সাথে আঁতাত করে গড়ে ওঠা এই অবৈধ ব্যাটারি চার্জিং গ্যারেজগুলোর ব্যবসা চলছে রমরমা। শত শত ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো এলাকার বিভিন্ন গ্যারেজে চার্জ দিয়ে থাকেন। অনেকে আবার নিজের বাড়ির আবাসিক লাইন থেকে তার দিয়ে গ্যারেজ বানিয়ে সেখানে করছে ব্যাটারি চার্জিংয়ের রমরমা ব্যবসা।
উপজেলার হযরতপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম, কলাতিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন বাজার এলাকায়, তারানগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকাসহ উপজেলার পশ্চিমের ইউনিয়ন হযরতপুর থেকে শুরু করে পূর্বের ইউনিয়ন কোন্ডা পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এলাকার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে, বাজারে এবং বাসাবাড়িতে গড়ে উঠেছে এই ধরনের অবৈধ ব্যাটারি চার্জিং গ্যারেজ।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও মহল্লার বসবাসকারী সাধারণ মানুষ এই প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এই ধরনের ব্যাটারি চার্জিং গ্যারেজের কারণে এলাকায় তারা ঠিকমতো বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছেন না। অনেক সময় এই ধরনের অবৈধ গ্যারেজ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটছে। গ্যারেজগুলোর মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় এবং স্থানীয়ভাবে রাজনীতিকদের ছত্রছায়ায় পরিচালিত হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ এদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না।
অনেক গ্যারেজের মালিক বলেন, তারা প্রশাসন ও বিদ্যুৎ অফিসের সাথে যোগাযোগ করে এই গ্যারেজগুলো পরিচালনা করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুতের এক কর্মকর্তা বলেন, অনেকেই বিদ্যুৎ অফিস থেকে আবাসিক মিটার নিয়ে এই ধরনের ব্যবসা করছেন বলে তারা জানতে পেরেছেন। ব্যাটারি চার্জিং করে ভাড়া দেওয়াটা এই আইনে বৈধ নয়।
ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক আব্দুল করিম বলেন, একটা রিকশা ব্যাটারি চার্জ দিতে গ্যারেজে দিতে হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এভাবে গ্যারেজগুলোতে প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৫০ থেকে ১০০টি করে ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হয়।
রিকশাচালকরা জানিয়েছেন, এই উপজেলায় অন্ততপক্ষে পাঁচ শতাধিক ছোট বড় গ্যারেজ রয়েছে। প্রতিটি গ্যারেজিং অনেকে চার্জিংয়ের পাশাপাশি রিকশাচালকদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন।
আগানগরের রিকশাচালক আব্দুর রহিম মিয়া বলেন, এই এলাকায় অন্ততপক্ষে ৫০টির মতো গ্যারেজ রয়েছে। এই গ্যারেজগুলোতে রিকশার ব্যাটারি চার্জিং ছাড়াও ক্যারাম জুয়াসহ বিভিন্ন অপকর্ম করছে প্রশাসনের ছত্রছায়ায়। যারা এর প্রতিবাদ করেন তাদের ওপর নেমে আসে সন্ত্রাসী হামলা।
এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, হযরতপুর ইউনিয়নে ত্রিশটি, কলাতিয়া ইউনিয়নে ৩৮টি, তারানগর ইউনিয়নে ৪২টি, শাকতা ইউনিয়নে ২৬টি, কালিন্দী ইউনিয়নে ২৩টি, বাসতা ইউনিয়নে ২৬টি, রুহিতপুর ইউনিয়নে ৩৫টি, জিনজিরা ইউনিয়নে ২৬টি, আগানগর ইউনিয়নে ২৮টি, শুভাঢ্যা ইউনিয়নে ৪৫টি, তেঘরিয়া ইউনিয়নে ১৭টি ও কোন্ডা ইউনিয়নে ৩৫টি ছোট-বড় গ্যারেজে এই ধরনের ব্যাটারি চার্জিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
এলাকাবাসী আরও অভিযোগ করে বলেন, এই সব গ্যারেজগুলোতে ব্যাটারি চার্জিং দেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত বসে তারা বিভিন্ন নামে জুয়া খেলা। এতে করে রাতভর সাধারণ রিকশাচালকসহ এলাকার বিভিন্ন বখাটেরা এই জুয়াখেলায় অংশগ্রহণ করে। এলাকাবাসী ও এলাকার সাধারণ নাগরিকরা এই এলাকার সকল গ্যারেজগুলো তদন্ত করে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন।
কেরানীগঞ্জের মোড়ে মোড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ ব্যাটারি চার্জিং গ্যারেজের বিষয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, এই বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিটি গ্যারেজে অভিযান পরিচালনা এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাব আল হুসাইন বলেন, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা এলাকায় যে সমস্ত অবৈধ ব্যাটারি চার্জিং গ্যারেজ রয়েছে সেগুলোকে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বিষয়ে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে।