গণঅভ্যুত্থানে যত পুলিশ মারা গিয়েছে, সব দায় শেখ হাসিনার : তথ্য উপদেষ্টা
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা শেখ হাসিনাকে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু, তিনি তা না করে দেশে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। ৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত আন্দোলনকারী ছাত্র জনতার ওপর স্নাইপার দিয়ে গুলি চালানো হয়েছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা তার সব নেতাকর্মী এবং পুলিশ বাহিনীকে মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়ে কাউকে না জানিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যান। শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্তের কারণে সেদিন অনেক পুলিশ সদস্য মারা যায়। এ আন্দোলনে যত পুলিশ মারা গিয়েছে এর দায় শেখ হাসিনার।
গতকাল রোববার (২০ অক্টোবর) ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মো. নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা বাংলাদেশের গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন লড়াই সংগ্রামের কথা জানি। আবার এর উল্টোদিকে বিভিন্ন ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের দালালির কথাও জানি। আমরা জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। বর্তমানে গণমাধ্যম যে স্বাধীনতা উপভোগ করছে তা এর আগে বাংলাদেশ কখনও এরকম চর্চা করেছে সেই ইতিহাস আমার জানা নেই।
উপদেষ্টা বলেন, গণমাধ্যম থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট এবং আকাঙ্ক্ষা পরিকল্পিতভাবে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখের কারণ, এখনও আমাদের অনেক ভাই-বোনেরা আহত অবস্থায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। এখনও অনেকে শহীদ হচ্ছে, অথচ আমাদের গণমাধ্যমগুলোতে সেই শহীদ এবং আহতদের কথা দিনকে দিন কমে আসছে। জনগণের স্মৃতি থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বেশ কিছু গণমাধ্যম জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের নিহত হিসেবে উল্লেখ করছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের সব প্রজ্ঞাপনে তাদের শহীদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশবাসী তাদের শহীদ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সেখানে গণমাধ্যম তাদের শহীদ বলতে কার্পণ্য করছে। গণমাধ্যমে তাদের মৃত এবং নিহত হিসেবে দেশবাসীর কাছে উপস্থাপন করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টা বলেন, এই গণঅভ্যুত্থান রক্তের মাধ্যমে ঘটেছে, রক্ত দিয়েই নতুন ইতিহাস তৈরি হয়েছে। যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন এই ইতিহাস মুছে যাওয়ার নয়। আমরা দেখেছি গণঅভ্যুত্থানের সময় অনেক সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন। প্রেসক্লাবের অনেক সদস্য আমাদের গণঅভ্যুত্থানের সমর্থন জুগিয়েছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। সেই সময় আমরা শুনেছি আমাদের সংবাদ প্রচার করতে দেওয়া হয়নি, সংবাদ সংগ্রহের কারণে মিডিয়া হাউসগুলোতে সাংবাদিকরা নির্যাতিত হয়েছেন। এখনও সেই সাংবাদিকদের নানা প্রকার চাপের মধ্যে রাখা হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। সে হাউসগুলোতে ফ্যাসিবাদের এজেন্টরা রয়ে গেছে। তাদের বিতাড়িত করতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা স্বাধীন গণমাধ্যমের কথা বলছি। সেই গণমাধ্যমের মধ্য থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিতাড়িত করে জনগণের সামনে চিহ্নিত করতে হবে। কারণ আমরা ফ্যাসিবাদ মুক্ত গণমাধ্যম চাই। ফ্যাসিবাদ মুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া নতুন বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব হবে না।
আমি টাইম ম্যাগাজিনকে বলেছিলাম শেখ হাসিনা একজন সাইকোপ্যাথ ও রক্তচোষা, তাই প্রমাণিত হলো। আমরা প্রথমে নিয়মতান্ত্রিক একটা আন্দোলন করছিলাম। সর্বপ্রথম সরকারের পেটুয়া বাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ করে। আমরা বারবার আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার কথা বলেছি। কিন্তু তারা আমাদের বন্দুকের সামনে দাঁড় করিয়েছে। আপনারা দেখেছেন কীভাবে আমাদের গুম করা হয়েছে এবং তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।
কারা নির্যাতিত আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ, সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক ও বর্তমান নেতাসহ অসংখ্য সাংবাদিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।