সাভারে ন্যাশনাল ব্যাংকে তালা ঝুলিয়ে দিল বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা
ন্যাশনাল ব্যাংকের সাভার শাখায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন গ্রাহকরা। দিনের পর দিন ঘুরেও আমানতের টাকা তুলতে না পেরে হতাশ গ্রাহকরা আজ বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকালে ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তারা ব্যাংকের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, অনেকদিন ধরে আমানতের টাকা না পেয়ে গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, ‘আমরা নিরুপায়। ক্যাশে টাকা না থাকায় গ্রাহকদের দিতে পারছি না।’
আজ সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস হওয়ায় সাভার বাজার রোডে ন্যাশনাল ব্যাংকের শাখায় ভিড় করেন গ্রাহকরা। তাদের অভিযোগ, দিনের পর দিন ঘুরেও ন্যূনতম পাঁচ হাজার টাকাও নিজেদের হিসাব থেকে তুলতে পারছেন না তারা।
পৌরসভার কাতলাপুর থেকে আসা গ্রাহক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমি ক্যানসারের রোগী। এতদিন মেয়েকে টাকা তোলার জন্য পাঠিয়েছি। একটি টাকাও তুলতে পারিনি। অসুস্থ অবস্থায় নিজে এসেছি। সারা দিন বসে থেকেও একটি টাকাও তুলতে পারলাম না। এখন আমার চিকিৎসা হবে কী দিয়ে?’
রাজাবাড়ী থেকে আসা আর একজন গ্রাহক অ্যাডভোকেট ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমার পরিবারের সঞ্চয়ের ৩০ লাখ টাকা এই শাখায়। এখন জরুরি প্রয়োজন একটি টাকাও তুলতে পারছি না।’
কাতলাপুর থেকে আশা গ্রাহক বিপাশা ইয়াসমিন বলেন, ‘এতদিন হজে যাবার জন্য টাকা জমা করেছি। হজের নিবন্ধন করেছি। এখন হজের টাকা এজেন্সিকে জমা দিতে পারছি না। টাকা না দিলে হজে যাব কী করে?’ এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
টঙ্গী থেকে আসা গ্রাহক সাথী বেগম জানান, তিনি সৌদি প্রবাসী। সেখান থেকে এই শাখায় ছয় লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন। ব্যাংকের সংকটের কথা শুনে সৌদি আরব থেকে ছুটে এসেছেন টাকা তুলতে। কিন্তু একটি টাকাও তুলতে পারেননি তিনি।
উত্তেজিত গ্রাহকরা একপর্যায়ে ব্যাংকের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। বিক্ষোভের মুখে ব্যাংকের কর্মকর্তারা খবর দেন সাভার মডেল থানায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ সময় উপপরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘গ্রাহকদেরকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা চলছে।’
ন্যাশনাল ব্যাংকের সাভার শাখার ব্যবস্থাপক মো. হাসিনুর রহমান বলেন, ‘আমরা গ্রাহকদের আস্থা হারিয়েছি। আস্থা বাড়াতে হলে গ্রাহককে টাকা দিতে হবে। সেই টাকা আমি দিতে পারছি না। কারণ ডিপোজিট জমার পরিমাণ শূন্য। অধিকাংশই তাদের মেয়াদী আমানত মেয়াদ পূর্তির আগেই ভেঙে ফেলছেন। কিন্তু আমি টাকা দিতে পারছি না।’
‘পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে সাপোর্ট দিচ্ছে, সেটা মহাসমুদ্রে দুই ফোঁটা জলের মতো। ব্যাংকার হিসেবে আমরা অভিশপ্ত জীবন অতিক্রম করছি’, যোগ করেন হাসিনুর রহমান।
ন্যাশনাল ব্যাংকের সাভার শাখার ব্যবস্থাপক মো. হাসিনুর রহমান আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব। নইলে এই ব্যাংক তলিয়ে যাবে।’
সূত্রের তথ্যমতে, ন্যাশনাল ব্যাংকের সাভার শাখায় আমানতের পরিমাণ ২৬০ কোটি টাকা। আমানত নির্ভর এই শাখায় ঋণের স্থিতি মাত্র ২৬ কোটি টাকা, যার ৪২ ভাগই খেলাপি।