আওয়ামী লীগ নামে বাংলাদেশে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না : সালাহউদ্দিন আহমেদ
আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, বাংলাদেশ মানুষ গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের বিতাড়িত করেছে। সেই আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ নামে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে না।’
আজ বুধবার (৫ ফ্রেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে আঞ্চলিক সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত ‘জাতীয় ঐক্য ও বর্তমান বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারকে সবার সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রদানের আহ্বান জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা বলছি, জুলাই আগস্টে নির্বাচন সম্ভব। তার আগে নির্বাচনের জন্য আইনি ও প্রতিষ্ঠানিক কিছু সংস্কার করে আমরা নির্বাচনমুখী হতে চাই। কেউ কেউ বলছেন নির্বাচন আগে, আবার কেউ কেউ বলছেন সংস্কার আগে। নির্বাচন ও সংস্কার দুইটাকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। যতদিন দেশ থাকবে ততদিন আমাদের সংস্কারের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।’
বিএনপিনেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ছয় মাস যথেষ্ট সময়। আজকে প্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এর আগে আরও চারটি সংস্কার জমা দিয়েছে। আমাদের সংস্কার কমিশনের কাছে আমরা আমাদের পরামর্শ জমা দিয়েছি। জানুয়ারিতে আলোচনার করার কথা ছিল। আর এখন বলছেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে আলোচনা করবেন। এরপর আলোচনার নামে আর কতদিন পার করবেন?’
বেইনপির এই নেতা বলেন, ‘একটি মহল রাজনৈতিক দল গঠন করার আলোচনা চলছে। কেউ কেউ বলছেন, তারা নির্বাচনে আসবেন, একটু সময় দিতে হবে।’
‘শেখ হাসিনা দেশের বাইরে থেকে বিশৃঙ্খলা কারার জন্য অর্থ বিনিয়োগ করেছে’, প্রধান উপদেষ্টা এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে বিএনপিনেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শেখ হাসিনার দোসররা উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত আছেন। আমরা পরামর্শ দিয়েছিলাম বাদ দেওয়ার জন্য, কিন্তু আপনারা শোনেন নাই। শেখ হাসিনার দোসররা প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বহাল রয়েছে। এদের বহাল রেখে আপনি বেশি দূর এগোতে পারবেন না। আপনি কিছু কিছু শুনেছে, এত শ্লথ গতিতে কী সংস্কার করবেন আমাদের বোধগম্য নয়। শেখ হাসিনার নিয়োজিত মন্ত্রিপরিষদ সচিব ২ মাস ৫ দিন চাকরি করে অবসরে গেছেন। কিন্তু তিনি আপনারা হয়ে কাজ করছেন নাকি শেখ হাসিনার পারপাস সার্ভ করেছেন? এভাবে সচিবালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে, আপনি কীভাবে সফল হবেন?’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, বাংলাদেশ মানুষ গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের বিতাড়িত করেছে। সেই আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ নামে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে না। আওয়ামী লীগের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিচার পরীক্ষার মধ্য দিয়ে নির্ধারণ হোক আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন করতে পারবে কিনা। সংবিধানের বিধান মোতাবেক আপনারা আইন প্রস্তুত করুন। জনগণ চায়, বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নির্মূল করা হোক।’
‘সর্ষের মধ্যে ভূত রেখে প্রধান উপদেষ্টা কখনো সফল হতে পারবেন না’ বলে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সুতরাং প্রশাসন হোক, বিচার বিভাগ হোক বা নির্বাচন ব্যবস্থার মধ্য থেকে ফ্যাসিবাদদের পরিষ্কার করতে হবে। গণতান্ত্রিক সংস্কারের মধ্যে দিয়ে সাংবিধানিক রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠাতা করতে চাই। এজন্য নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে অগ্রাধিকার দিতে হবে। নির্বাচনমুখী সংস্কারের জন্য স্বল্পমেয়াদী সংস্কার চিহ্নিত করতে হবে। মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী সংস্কার জন্য বিএনপি ৩১ দফায় অনেক আগেই দিয়েছে। শেখ হাসিনা পলায়ন করছে, এটাই বড় সংস্কার। ২০১১ সালে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করেছিল, সেই বিধান আবারও সংযুক্ত হয়েছে। স্বীকৃত দিতে হলেও নির্বাচিত সরকার দরকার।’
বেশি সময়ক্ষেপণের জন্য কোনো কৌশল অবলম্বন করলে জনগণ মেনে নেবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভোটার তালিকা তৈরি হয়ে যাবে। এরপর সীমানা নির্ধারণসহ অন্যান্য আইন প্রক্রিয়ার কাজ চলবে। সেগুলো কাজ শেষ করতে খুব বেশি সময় লাগবে না। এসব কাজ একই সাথে চলতে পারে। সুতরাং, জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠাতা করুন।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল খানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানসহ অন্যান্যরা।