এনআইডি সেবা ইসির অধীনে রাখতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে চিঠি

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে রাখতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে এনআইডি সেবা সরিয়ে নিলে সাংবিধানিক ক্ষমতা খর্ব হবে এবং ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বাধাগ্রস্ত হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন।
আজ রোববার (৯ মার্চ) ইসি সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর পাঠানো হয়। এ ছাড়া চিঠির অনুলিপি অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন-প্রণয়নকারী ব্যক্তি ও সংসদ বিষয়ক সচিবকেও দেওয়া হয়েছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়, এনআইডি কার্যক্রম ইসি থেকে সরিয়ে নিলে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ক্ষমতা খর্ব হবে। এ ছাড়া ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বাধাগ্রস্ত হবে। তাই এই কার্যক্রমটি ইসির অধীনেই রাখা প্রয়োজন। চিঠিতে ইসি সচিব এনআইডি কর্মকর্তাদের দীর্ঘ ১৭ বছরের অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেছেন।
গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) এনআইডি সেবা ইসিতে রাখতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন কর্মকর্তারা। সে সময় কঠোর কর্মসূচির আল্টিমেটাম দিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন ইসির পক্ষ থেকে জোরালো মতামত দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘এনআইডি হলো ভোটার তালিকার বাই প্রোডাক্ট। এটা তো আগে ছিল না। আগে ভোটার কার্ড ছিল। আস্তে আস্তে যখন ডেভেলপ হলো তখন না এটা হলো। ১৭ বছর ধরে এখানে শ্রম, ঘাম দিয়েছে এখানকার লোকজন। এরাই তো ডেভেলপ করে এই পর্যন্ত এনেছে। নিজেদের কাজের অতিরিক্ত কাজ হিসেবে এটা করেছেন তারা। একটা নেটওয়ার্ক সারা দেশে ডেভেলপ হয়েছে, এক্সপার্ট ডেভেলপ হয়েছে। সার্বিক এই বিষয়গুলো নিশ্চয় সরকার বিবেচনায় নেবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ‘এনআইডি নিয়ে বারবার একেক সময় একেক রকম সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি হয়। তারা এনআইডি নিয়ে টানা-হেঁচড়া করে। এর আগে একাধিকবার চেষ্টা হয়েছিল, মাঝে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। এখন আবার নতুন কমিশন তৈরি করে তাতে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, কোনো না কোনো উদ্দেশ্যে এগুলো করা হচ্ছে। আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।’
এর আগে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার ইসির সঙ্গে কোনো পর্যালোচনা না করে এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এরপর ২০২৩ সালে এসে নতুন একটি আইনও করে। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সেই উদ্যোগ থমকে যায়। পরবর্তীতে কর্মকর্তাদের দাবির মুখে এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারকে সেই উদ্যোগ বাতিল করার সুপারিশ করলে সরকার তা মেনে নেয়। কিন্তু নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ইসিকে অবহিত না করেই ফের এনআইডি সেবা সরিয়ে নিতে ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন (কমিশন), ২০২৫’ নামে একটি অধ্যাদেশ জারি করার উদ্যোগ নেয় সরকার।