নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে ‘অত্যন্ত কঠোর’ হচ্ছে সরকার : আসিফ নজরুল

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে পরিবর্তিত কিছু আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, নারীর প্রতি সহিংসতা-নির্যাতন ও নৈরাজ্যমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর হচ্ছে সরকার।
গতকাল রোববার (৯ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এক বৈঠকে অংশগ্রহণ শেষে আইন মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
এ সময় ড. আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশের নারীর প্রতি যে সহিংসতা নির্যাতন ও ধর্ষণ হচ্ছে সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। এই মামলাগুলোর সুবিচার- দ্রুত নিষ্পত্তি এবং যেকোনো ধরনের যৌন হয়রানি বন্ধের জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণে এই সরকার এবং প্রশাসনের সকলেই বদ্ধপরিকর, এখানে কোনোরকম সন্দেহের অবকাশ নেই।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাথে আলোচনার কথা জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, আজ এই মিটিংটা হওয়ার কথা ছিল না, কিন্তু কিছু ঘটনার কারণে আপনাদের মত আমরাও চরম বিব্রত। আজকে সকালে এসে আমরা মিটিং করেছি একটা আইনগত পরিবর্তন আনার জন্য। কিছু বিষয় আমাদের অংশীজনদের সাথে পরামর্শ করতে হবে এরপর আমরা তা চূড়ান্ত করব এবং চেষ্টা করব কয়েক দিনের মধ্যে এই আইনগত পরিবর্তনটা আনার জন্য।
এ সময় ড. আসিফ নজরুল বলেন, দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা যাবে না এবং দায়িত্ব যাকে দেওয়া হবে তাকেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে হবে। তদন্তের জন্য নতুন বেঁধে দেওয়া সময় হবে ১৫ দিন ও বিচারের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে ৯০ দিন।
এ সময় আইন উপদেষ্টা বলেন, ৯০ দিনের মধ্যে যদি বিচার নাও হয়, তবে এই অজুহাতে কাউকে জামিন দেওয়া যাবে না। পূর্ববর্তী আইনে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার না হলে ধর্ষণের আসামিকে জামিন দেওয়া হতো কিন্তু এখন থেকে সেটা আর করা হবে না।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, এখানে ধর্ষণের মামলার বিচারের ক্ষেত্রে যদি কোনো রকম গাফিলতি থাকে তার বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল অ্যাকশন নেওয়ার সুনির্দিষ্ট বিধান আমরা আইনে সংযোজন করব। এ ছাড়া এ ধরনের মামলা বিচারের ক্ষেত্রে ডিএনএ ফরেনসিক নেওয়ার প্রক্রিয়াতে অনেক সময় লেগে যায়, যেহেতু এই প্রক্রিয়াটা দেশে অপ্রতুল। এর ফলে বিচার প্রক্রিয়া অনেক দেরি হয়ে যায়। আমরা আমাদের অংশীজনদের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সংশোধন আনব।
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, উপযুক্ত ক্ষেত্রে বিচারক যদি মনে করে তাহলে শুধুমাত্র মেডিকেল সার্টিফিকেটের ভিত্তিতেই মামলার বিচারকার্য এবং তদন্তকার্য চালানো সম্ভব, তাহলে সেরকম ব্যবস্থা তিনি নিতে পারবেন। সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি জেলায় ডিএনএ ফরেনসিক ল্যাবরেটরি স্থাপন করার জন্য অচিরেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়াও এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় আমাদের যে আলোচনা হয়েছে সেখানে আরও কিছু সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি।
আসিফ নজরুল বলেন, রাস্তাঘাটে যদি যৌন নিপীড়ন হয়, হয়রানি হয় তাহলে এই ব্যাপারে প্রতিকার নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটা আলাদা টোল ফ্রি হটলাইন দ্রুত প্রদান করা হবে এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হবে। এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ডেডিকেটেড সেল থাকবে, সেইসঙ্গে ধর্ষণ মামলাগুলো তদন্ত করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের আলাদা একটা সেল থাকবে, যেখানে কাউকে অযথা কালক্ষেপণ যেন না করা হয় সেটা দেখা হবে।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, আইন সংশোধন করার জন্য অংশীদারদের সাথে আলোচনা করার পর সপ্তাহখানেকের মধ্যে আমরা একটা ড্রাফ্ট বা খসড়া তৈরি করব, হয়ত সেটা পাস হতে আর কয়েকদিন সময় লাগবে। সংক্ষুব্ধ হয়ে মানুষ দাবি করেছে ২৪ ঘণ্টা মধ্যে বিচার। কিন্তু আইনগতভাবে আমাদের পক্ষে সেটা সম্ভব নয়, আপনারা জানেন আইনের একটা নিয়ম আছে। বলা হয় দ্রুত বিচার করতে গিয়ে অনেক সময় অবিচার করা হয়ে যেতে পারে। পুলিশ এবং আদালত সবাই একসাথে কাজ করে আশা করি দ্রুতই বিচার কাজ শেষ করতে পারবো। তবে প্রস্তাবিত এ সব বিষয়ে আমরা অংশীজনদের সাথে আলোচনা করব।