রাজশাহীতে ঈদে ৫০ কোটি টাকার রেশম বাণিজ্যের সম্ভাবনা

সিল্ক বা রেশমের প্রসঙ্গ তুললেই অকপটে চলে আসে রাজশাহীর নাম। সিল্ক ও রাজশাহীর ইতিহাস-ঐতিহ্য যেন একে অপরের পরিপূরক। কালের বিবর্তনে সিল্কের সেই জৌলুস না থাকলেও ঐতিহ্য ও আভিজাত্যে অনন্য উচ্চতায় রয়েছে সিল্কের পোশাক। রাজশাহীর সিল্ক পাড়ায় যেন নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। নতুন উদ্যোক্তা এবং সিল্ক শিল্পীরা তাদের সৃষ্টি দিয়ে পুরো বাজারকে নতুন রূপ দিয়েছেন। ফলে সিল্ক পণ্য এখন শুধু ঐতিহ্যের প্রতীক নয়, বরং ব্যবসার ক্ষেত্রেও ব্যাপক সম্ভাবনার সৃষ্টি করছে।
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে জমজমাট হয়ে উঠেছে ঈদ বাজার। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী পছন্দ তালিকায় রাখছেন সিল্কের পোশাক। ফলে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ঈদ উপলক্ষে জমে উঠেছে রাজশাহীর সিল্ক পাড়া। ঈদ যত এগিয়ে আসছে ঠিক ততই জমে উঠছে সিল্কের বাজার। এতে কারখানা ও শো-রুমগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে পুরোদমে। রাজশাহীর আশপাশেসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও ক্রেতারা আসছেন প্রিয়জনদের পছন্দের পোশাক কিনতে। সব মিলিয়ে এবারের ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বাণিজ্যের প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিক্রেতারা জানান, রাজশাহী ছাড়াও আশপাশের জেলাসহ রাজধানী থেকেও আসছে বিভিন্ন পোশাকের অর্ডার। অনেক সরাসরি এসে কিনছেন আবার অনলাইন থার্ড পার্টির মাধ্যমেও কিনছেন কেউ কেউ। প্রিয় মানুষকে উপহার দিতে জুরি নেই সিল্ক শাড়ি-পাঞ্জাবির। তাই প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও রেশমের তৈরি পোশাকে এনেছেন বৈচিত্র্য ও নতুনত্বের ছোঁয়া। নজরকাড়া বাহারি ডিজাইনের রেশমি পোশাক কিনতে সিল্কের শো-রুমগুলোর দিকেই এখন সবার পদচারণা। প্রতিবারের মতো এবারও রাখা হয়েছে শাড়ি, পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি, থ্রি-পিস, শার্টসহ বিভিন্ন পোশাক। বলাকা, মক্কা, কাতান, ছিপ কাতানসহ বিভিন্ন নামের শাড়ি ১ হাজার থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি বিক্রি হচ্ছে। আর পাঞ্জাবি দেড় হাজার থেকে ৭ হাজার, শেরওয়ানি ৮ থেকে ২৫ হাজার, থ্রি-পিস ১ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে।
পরিবারের সাথে ঈদের পোশাক কিনতে আসা সুইডেন প্রবাসী মুনিরা হোসাইন বলেন, সিল্কের কাপড়গুলো অনেক সুন্দর। দুটো শাড়ি নিয়েছি, যেমন কালার চেয়েছিলাম তেমনই পেয়েছি। একটা শাড়ি ১৩ হাজার, আরেকটা শাড়ি ৮ হাজার টাকা দাম লেগেছে। আরও দেখছি যদি ভালো লাগে কিনবো।
রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশন শো-রুমের মালিক খুরশিদা খাতুন খুশি বলেন, রাজশাহী সিল্কের মসলিন কাপড় এবার আমরা বেশি তৈরি করেছি। মসলিনের পাশাপাশি সফ্ট সিল্কও আছে। এছাড়াও কাতান, জয়শ্রী সিল্ক, তসর সিল্কও আছে। যদিও রাজশাহী সিল্কের সুতার দাম বেড়ে গেছে, তবুও আমরা এগুলোর কিছুটা কম দাম রেখেছি। যেন সব ক্রেতা কিনতে পারেন। কারণ অনেক বড় শো-রুম দেখে ক্রেতারা হয়তো একটু ভয় পায়। কিন্তু আমরা দামটা কমই রাখছি। আমাদের মসলিন শাড়ি ১৭৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আছে। কাতান শাড়ি ৩৫০০ থেকে শুরু করে ১০ হাজারের মধ্যে আছে। থ্রিপিস ১৪৫০ থেকে শুরু করে ১০ হাজার পর্যন্ত। ফলে এবার মসলিন সিল্কের চাহিদা বেশি।

সপুরা সিল্ক মিল লিমিটেডের পরিচালক আশরাফ আলী বলেন, যেকোনো উৎসবে সিল্কের একটি বড় চাহিদা থাকে। সেই হিসেবে এবারও চাহিদা বাড়তির দিকে। এবার আমরা কিছু শার্টও ভ্যারিয়েশন কালার কম্বিনেশনের পাশাপাশি হাতের কাজ নিয়ে এসেছি। এখন পর্যন্ত বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। ক্রেতারাও কাজগুলো পছন্দ করছেন। সাধারণত চাহিদা বেশি থ্রিপিস ৭ হাজার থেকে ৩০ হাজার, পাঞ্জাবি ৬ থেকে ১২ হাজার এবং শাড়ির অনেক ভ্যারিয়েশন আছে। তবে ৫ থেকে ৭ হাজারের মধ্যেই চাহিদা বেশি।
বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, এবার আমাদের প্রস্তুতি বেশ ভালো ছিল। তাই দুই মাস আগে থেকেই সিল্কের থান কাপড় সিজন শুরু করা হয়। এবার থানের উৎপাদন বেশি। এটির চাহিদা এখনও বেশি। আবার এবার ঢাকাতেও মসলিন কাপড়ের চাহিদা বেশ ভালো ছিল।
লিয়াকত আলী আরও বলেন, এখনও পাওয়ার লুমগুলোতে কাপড় তৈরিতে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজ চলছে। কিন্তু শো-রুমে একটু মন্দা ভাব। তবে যেহেতু এবার ঈদে বড় একটি ছুটি। সেহেতু এই ছুটিতেও অনেক বিক্রি হবে। তাই আমরা আশা করছি এবার সিল্কের প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেচা-বিক্রি হবে।