রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে দুপুরে অভিনেতা আব্দুল কাদেরের মরদেহ মিরপুরের বাসভবনে নেওয়া হয়। বাসভবনের নিচ থেকে দাদা আব্দুল কাদেরের মরদেহ প্রথম জানাজার জন্য নেওয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়ে প্রয়াতের নাতনি সিমরীন লুবাবা।

ছোটবেলা থেকে দাদার মতো অভিনয়ে নাম লিখিয়েছে লুবাবা। দাদার কাছ থেকে শিখেছে অভিনয়ের খুঁটিনাটি। দাদা নিজ হাতে তাকে শিখিয়েছেন সব। তাই তো সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে কাঁদতে কাঁদতে দাদার জন্য দোয়া চেয়েছে লুবাবা।

দাদার সঙ্গে শেষ কী কথা হয়েছিল, এমন প্রশ্নে কাঁদতে কাঁদতে লুবাবা বলে, ‘শেষ দিন দাদার সঙ্গে কথা হয়নি। শেষ দিন কথা বলেননি দাদা। আগের দিন বলেছিলেন, তুমি সব সময় ভালো কাজ করবে, বড়দের সম্মান করবে।’ এরপর কান্নায় আর কথা বাড়াতে পারেনি লুবাবা। 

এর আগে আব্দুল কাদেরের স্ত্রী খাইরুন নেসা উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, “উনি সব কাজ শেষ করে যেতে পারেননি, কিছু কাজ তো বাকি আছে। নাতি-নাতনি (নাতি সাদমান এহসাস ও নাতনি সিমরীন লুবাবা) তাঁর জান ছিল, সব সময় বুকে আগলে রাখতেন, পাগল ছিলেন... শেষবারের মতো উনি দেখে যেতে চাইতেন, নাতি-নাতনি পড়াশোনা করবে; নাতনি এখন যে অভিনয় করছে, ওটা নিয়মিত করবে। তারপর সে গান শিখবে। তারপর তাঁর ইচ্ছে ছিল, সে ডাক্তার হবেই। এই কাজগুলো তিনি করে যেতে পারলেন না। নাতনিকে নিজে কেঁদে-কেঁদে অভিনয় করে দেখাতেন... এভাবে করবে...।’ এরপর কান্নায় ভেঙে পড়েন খাইরুন নেসা।

রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস সেন্ট্রাল মসজিদে সদ্যপ্রয়াত জনপ্রিয় অভিনেতা আব্দুল কাদেরের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়েছে বাদ জোহর। জানাজায় অংশ নেন অভিনেতার আত্মীয়-স্বজন, ঘনিষ্ঠজন ও মসজিদের মুসুল্লিরা। কিছুক্ষণের মধ্যে আব্দুল কাদেরের মরদেহ সহকর্মী ও সর্বস্তরের মানুষকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মিরপুর থেকে রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে নেওয়া হবে। সেখান থেকে তাঁর মরদেহ নেওয়া হবে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে। বাদ মাগরিব দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হবে।

আব্দুল কাদের এভারকেয়ার হাসপাতালে আজ সকাল ৮টা ২০ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুতে বিনোদন অঙ্গনজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাদেরের প্যানক্রিসের (অগ্ন্যাশয়) ক্যানসার জটিল আকার ধারণ করলে গত ৮ ডিসেম্বর চেন্নাইয়ে নেওয়া হয়। বেশ কিছু পরীক্ষার পর ১৫ ডিসেম্বর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ভারতের চেন্নাইয়ের ভেলোর শহরের সিএমসি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এ অভিনেতাকে। এরপর তাঁর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়।

আব্দুল কাদের কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিক নাটকে ‘বদি’ চরিত্রে অভিনয় করে তুমুল আলোচনায় আসেন। এ ছাড়া জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র পরিচিত মুখ তিনি। হাস্যরসাত্মক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি তুমুল জনপ্রিয় টেলিভিশনের পর্দায়।