কুষ্টিয়ার নারী ‘কালো পাখি’, বসন্তকালে তাঁকে বলতে পারেননি হাশিম মাহমুদ...
তুমি বন্ধু কালা পাখি, আমি যেন কী
বসন্তকালে তোমায় বলতে পারিনি...
অন্তর্জালজুড়ে রীতিমতো ভাইরাল ২৯ জুলাই মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘হাওয়া’ সিনেমার ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানের কথা। গানটি গেয়েছেন এরফান মৃধা শিবলু। কথা ও সুর করেছেন হাশিম মাহমুদ।
এই গীতিকার ও সুরকারকে আপনাদের না চেনার কথা। কিন্তু বছরখানেক আগের একটি ঘটনা স্মরণ করা যেতেই পারে। ‘তোমায় আমি পাইতে পারি বাজি’ শিরোনামের একটি গান ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল। উষ্কখুষ্ক আর এলোমেলো দাড়িওয়ালা এক বৃদ্ধ গানটি খালি গলায় গেয়েছিলেন বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই। সেই বৃদ্ধই এই হাশিম মাহমুদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় যাঁদের যাতায়াত আছে, তাঁরা এই হাশিম মাহমুদকে খুব ভালো করেই চেনেন। সেই সূত্রে হাশিম মাহমুদকে নিজের প্রথম সিনেমায় কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করেছেন মেজবাউর রহমান সুমন।
এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপে সুমন জানালেন, ‘চারুকলায় পড়ার সময় থেকেই হাশিম ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। কত বিকেল পার করেছি হাশিম ভাইয়ের গানে। যখন এই সিনেমার কাজটা শুরু করি, তখনই ঠিক করেছিলাম গানটা সিনেমায় রাখব। কিন্তু হাশিম ভাইকে পাচ্ছিলাম না, তিনি এখন আর চারুকলায় আসেন না। পরে টানা চার মাস খোঁজ নিয়ে জানলাম তিনি অসুস্থ, থাকেন নারায়ণগঞ্জে। গানের অনুমতিও পেলাম, কিন্তু অসুস্থতার কারণে তাঁকে দিয়ে গাওয়ানো হলো না, সেটা হলে আরও ভালো লাগত।’
এনটিভি অনলাইন সুমনের কাছে জানতে চেয়েছিল, হাশিম মাহমুদ এই ‘কালা পাখি’ কাকে বলেছেন? মানে গানটির পেছনের গল্প।
মেজবাউর রহমান সুমন সেই গল্প বলেছেন গানটির গায়ক এরফান মৃধা শিবলুর বরাতে। বলছিলেন, ‘হাশিম মাহমুদ ভাইয়ের সঙ্গে অনেক দিন কাজ করেছেন এরফান মৃধা শিবলু। তাঁকে একবার গল্পে গল্পে বলেছিলেন, তিনি কুষ্টিয়ায় লালন শাহ মাজারে গিয়ে গানটি লিখেছিলেন। সেখানে এক নারীর প্রেমে পড়েছিলেন, তাঁর ভাষ্যে, সেই নারী কালো পাখির মতো কালো। তাঁকেই বসন্তকালে মনের কথা বলতে পারেনি।’
তবে এই গল্প তিনি মজা করে বলেছিলেন কি না তা আমরা নিশ্চিত নই।
সুমন আরও জানিয়েছেন, ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটায় খমক ছাড়া কোনো বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয় নাই। নৌকার কাঠ, বাঁশ, হাঁড়ি-পাতিল দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গানটি কম্পোজ করেছেন ইমন চৌধুরী, আর এই অ-যন্ত্রগুলো বাজিয়েছেন মিঠুন চাকরা।
হাশিম এখন সিজোফ্রেনিক রোগী। পরিবারে তাঁর ভাইসহ আরও কিছু আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন, তাঁরাই এখন হাশিমের দেখাশোনা করেন। গতকাল তাঁর সঙ্গে দেখা করে এসেছে ‘হাওয়া’ সিনেমার টিম। তাঁকে ঢাকা নিয়ে আসতে চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি রাজি হননি। সিনেমা মুক্তির পরে হাশিম মাহমুদকে ঢাকা নিয়ে আসা হবে বলেও জানিয়েছেন মেজবাউর রহমান সুমন।
‘হাওয়া’ সিনেমাটির গল্প মাঝসমুদ্রে গন্তব্যহীন একটি মাছ ধরার ট্রলারে আটকে পড়া আট জন মাঝি-মাল্লা এবং এক রহস্যময় বেদেনিকে ঘিরে কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। তারকাবহুল এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, নাজিফা তুষি, শরিফুল রাজ, সুমন আনোয়ার, নাসির উদ্দিন খান, সোহেল মণ্ডল, রিজভী রিজু, মাহমুদ হাসান এবং বাবলু বোস।
মেজবাউর রহমান সুমনের কাহিনি এবং সংলাপে চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য লিখেছেন মেজবাউর রহমান সুমন, সুকর্ন সাহেদ ধীমান এবং জাহিন ফারুক আমিন।