ফরীদির চশমা তিন লাখ ২৫ হাজার ১২ টাকায় কিনলেন হাঙ্গেরিপ্রবাসী
বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। বাংলাদেশেও এ মিছিল লম্বা হচ্ছে দিন দিন। ছোঁয়াচে এ রোগের বিস্তার ঠেকাতে হলে সামাজিক দূরত্বের বিকল্প নেই। দেশের বিভিন্ন জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ।
করোনার কারণে অসহায় হয়ে পড়া হতদরিদ্রদের সহায়তায় অর্থ সংগ্রহে নিলামে তোলা হয় বাংলা চলচ্চিত্রের প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির ব্যবহৃত শেষ চশমাটি। কিংবদন্তি অভিনেতার চশমাটি তিন লাখ ২৫ হাজার ১২ টাকায় কিনে নিয়েছেন হাঙ্গেরিপ্রবাসী এক বাংলাদেশি।
বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) রাতে ‘অকশন ফর অ্যাকশন’ নামে ফেসবুক পেজে লাইভে হুমায়ুন ফরীদির চশমার নিলাম কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। সে সময় অংশ নেন হুমায়ুন ফরীদির একমাত্র মেয়ে শারারাত ইসলাম দেবযানী। এ ছাড়া অংশ নেন অভিনেতা আফজাল হোসেন, মিশা সওদাগর, আফসানা মিম, ইরেশ যাকের, সাজু খাদেমসহ অনেকে। রাত ১১টায় নিলাম শুরু হয়। নিলামের ভিত্তিমূল্য ছিল এক লাখ টাকা। এরপর সর্বোচ্চ দর ওঠে তিন লাখ ২৫ হাজার ১২ টাকা।
হাঙ্গেরিপ্রবাসী ওই বাংলাদেশি তাঁর দুই মেয়েকে চশমাটি উপহার দেবেন। কিন্তু নাম প্রকাশ করতে চান না। ছোটবেলা থেকে হুমায়ুন ফরীদির ভক্ত নিলামে বিজয়ী ওই প্রবাসী।
হুমায়ুন ফরীদির মেয়ে শারারাত ইসলাম দেবযানী বলেন, ‘এটা কোনো কাকতাল কিনা জানি না। নাকি প্রকৃতির কোনো খেলা। আমার বাবার চশমা, মানে একজন মেয়ে তাঁর বাবার চশমা দিচ্ছেন, আরেকজন বাবা তাঁর মেয়েদের জন্য চশমাটা কিনছেন—এর চেয়ে সুন্দর আর কিছু হতে পারে না।’
এর আগে করোনাকালীন এই সংকট মোকাবিলায় গায়ক তাহসান রহমান খানের প্রথম অ্যালবাম ‘কথোপকথন’-এর মাস্টার ক্যাসেট ও ‘ঈর্ষা’ গান লেখার কাগজটি নিলামে উঠেছে, বিক্রি হয়েছে সাড়ে সাত লাখ টাকায়।
এ ছাড়া ‘অকশন ফর অ্যাকশন’ পেজের মাধ্যমে নিলামে তোলা হয় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের গত বিশ্বকাপ মাতানো ব্যাটটি। সেটি ২০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা সাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশনে দেওয়া হয়েছে। এই টাকা দিয়ে দুস্থ মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।
দেশের কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি। মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র সব জায়গায় ছিল তাঁর সাবলীল বিচরণ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে তিনি নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের সাহচর্যে আসেন। সেলিম আল দীনের ‘শকুন্তলা’ নাটকের ‘তক্ষক’ চরিত্রে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৮২ সালে তিনি ‘নীল নকশার সন্ধানে’ নাটকে অভিনয় করেন। এটি ছিল তাঁর প্রথম টেলিভিশন নাটক।
এরপর একে একে অভিনয় করেছেন ‘ভাঙনের শব্দ শোনা যায়’, ‘সংশপ্তক’, ‘দুই ভাই’, ‘শীতের পাখি’ এবং ‘কোথাও কেউ নেই’-এর মতো দর্শকপ্রিয় নাটকে। ‘হুলিয়া’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামলছায়া’, ‘একাত্তরের যিশু’, ‘আনন্দ অশ্রু’সহ অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। ২০১২ সালে এ কিংবদন্তি অভিনেতা মারা যান।