মুখোমুখি প্রযোজক সমিতি ও জায়েদ খান
‘সংগঠনের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে’ জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও প্রযোজক জায়েদ খানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি। এরই মধ্যে ওই নোটিশ জায়েদের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জেড কে মুভিজের কার্যালয়ের ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে।
গত ৭ মার্চ কার্যনির্বাহী পরিষদের সপ্তম সভায় জায়েদ খানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় বলে জানিয়েছেন প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম। তবে করোনার কারণে দীর্ঘদিন সমিতির কার্যক্রম বন্ধ ছিল। গত ১২ জুলাই ফের এক সভায় জায়েদ খানকে নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী গতকাল সোমবার (১৩ জুলাই) তাঁকে নোটিশ পাঠানো হয়।
কী ধরনের ‘সংগঠনের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে’ জড়িত জায়েদ খান, জানতে চাইলে এনটিভি অনলাইনকে শামসুল আলম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের চলচ্চিত্রে মন্দাভাব চলছে। চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে আমরা এফডিসির সব সংগঠন মিলে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি আরো আগে। সেখানে চলচ্চিত্রের নির্মাণব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেহেতু দেশে সিনেমা হল কমেছে, তাই খুব বেশি টাকা সিনেমা হল থেকে তুলে আনা সম্ভব নয়। আমরা সব সংগঠন এক হলেও জায়েদ খান এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। যে কারণে একজন প্রযোজক হিসেবে তাঁকে শোকজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চিঠি হাতে পাওয়ার দিন থেকে সাত দিনের মধ্যে তাঁকে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।’
শামসুল আলম আরো বলেন, ‘সিনেমার নির্মাণব্যয় কমাতে গেলে সবাইকে পারিশ্রমিক কমাতে হবে। সেই হিসেবে শিল্পীদেরও কমবে। জায়েদ খান বিষয়টি নিয়ে শিল্পীদের বাধা দিচ্ছেন, তাঁদের ফোন করে বিষয়টি মানতে না করছেন। এমনকি এসএমএস (খুদে বার্তা) দিয়েও শিল্পীদের এর বিপক্ষে দাঁড়ানোর জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন। বিষয়টি একজন প্রযোজক হিসেবে সমিতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার শামিল।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনটিভি অনলাইনকে জায়েদ খান বলেন, ‘গত নভেম্বরে প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি থেকে একটি কাগজ পাঠানো হয়, সেখানে কিছু সিদ্ধান্ত জানানো হয় চলচ্চিত্র শিল্পীদের নিয়ে। চলচ্চিত্র শিল্পীদের পারিশ্রমিক ও সুবিধা কমানোর সিদ্ধান্ত জানানো হয় আমাদের। বিষয়টি নিয়ে আমরা শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিই যে আমরা এই সিদ্ধান্তে একমত নই। এর বিশেষ কারণ হচ্ছে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমাদের সমিতির কোনো সদস্য ছিলেন না। আমরা মনে করি, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে অবশ্যই কোনো প্রতিনিধি রাখা উচিত। পরে কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা সমিতির সব সদস্যকে ফোন ও এসএমএস করে জানাই যে, আমাদের পারিশ্রমিক বা সুবিধা আগের মতোই থাকবে। এটা আমার একক কোনো সিদ্ধান্ত নয়।’
জায়েদ খান বলেন, ‘গতকাল (১৩ জুলাই) প্রযোজক সমিতির নোটিশ পেয়ে আমি অবাক হয়েছি। কারণ চিঠিতে আমাকে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নয়, প্রযোজক সমিতির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ শিল্পীদের যে বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছে, আমি সেই কাজটি করেছি শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে, প্রযোজক সমিতির সদস্য হিসেবে নয়। শিল্পী সমিতির মানুষ হিসেবে শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষা করা আমার কাজ। এটি নিশ্চিত করার জন্যই শিল্পীরা আমাকে ভোট দিয়ে বারবার নির্বাচিত করেছেন।’
আক্ষেপ করে জায়েদ খান বলেন, ‘এমন যদি হতো যে আমি প্রযোজক সমিতির নিয়ম ভেঙে আমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জেড কে মুভিজের ব্যানারে নতুন ছবি শুরু করেছি, তবে আমাকে প্রযোজক হিসেবে শাস্তি দিতে পারে সমিতি। একজন শিল্পী হিসেবে আমি যদি আমার পারিশ্রমিক না কমাই, তবে কেন আমাকে প্রযোজক হিসেবে চিঠি দেবেন?’
২০০৮ সালে মোহাম্মদ হান্নানের ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে ঢালিউডে পা রাখেন পিরোজপুরে জন্ম নেওয়া জায়েদ খান।
২০১৭ সালে জায়েদ খানের জেড কে মুভিজ নামের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ হয় ‘অন্তরজ্বালা’। প্রযোজনার পাশাপাশি এতে চিত্রনায়িকা পরী মণির বিপরীতে অভিনয়ও করেন জায়েদ।
সিনেমায় অনিয়মিত হলেও টানা দুই মেয়াদে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জায়েদ খান।