হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে যে কথা বলা হয়নি রিয়াজের
‘শঙ্খনীল কারাগার’ থেকে ‘ঘেটু পুত্র কমলা’ বাংলা সিনেমার আকাশে হুমায়ূন আহমেদ যেন ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’। ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’ থেকে ‘নন্দিত নরকে’ তিনি ঢাকাই সিনেমাকে দিয়ে গেছেন এক ‘শ্যামল ছায়া’। হুমায়ূন আহমেদ তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে জাদু দেখিয়েছেন; সেই জাদু কথার, শব্দের আর নির্মাণের। আজ ১৩ নভেম্বর, এই কিংবদন্তির ৭২তম জন্মদিন।
এমন দিনে এনটিভি অনলাইনের কাছে হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত চিত্রনায়ক রিয়াজ আহমেদ। যিনি হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে তাঁর ক্যারিয়ারের একটা দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন। হুমায়ূন আহমেদের ‘দুই দুয়ারী’ সিনেমায় অভিনয় করে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন রিয়াজ।
হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে যা বলা হয়নি রিয়াজের
আমি শেয়ার করেই ফেলেছি স্যারের সঙ্গে যা কিছু আছে। আর যা করিনি সেগুলো কিছু কনট্রোভার্সি আছে। সেগুলো নিয়ে আমি আসলে পাবলিকলি বলতেও চাই না। এগুলো আমাদের মধ্যেই রাখতে চাই। আর আমার কাছে যা মনে হয়েছে যেটা হয়তো শেয়ার করা হয়নি। মানুষের চরিত্র বোঝার অদ্ভুত এক ক্ষমতা ছিল হুমায়ূন আহমেদ স্যারের। উনি আধ্যাত্মিকতা নিয়ে কাজ করতে খুব পছন্দ করতেন। কিছু আধ্যাত্মিকতা উনি বিশ্বাসও করতেন হয়তো। সেই হিসেবে ছোট একটি ঘটনা, উনি যেটা আমাদের বলতেন, উনার খুব কদম ফুল কাছের শখ ছিল। যেটা আগেও অনেক জায়গায় এসেছে। এবং উনি অনেকবার চেষ্টা করেছেন কদমফুলের গাছ লাগাতে। কিন্তু যতবারই উনি চেষ্টা করেছেন ততবারই গাছটা হয়নি, বাঁচেনি। একদিন উনি যখন চিন্তা করলেন আর কদম গাছ লাগাবোই না, ঠিক তাঁর পরের দিন সকালে উঠে দেখলেন তাঁর দরজার সামনে (বের হওয়ার পথে) একটা গাছ বড় হচ্ছে। হঠাৎ করে এটা দেখে উনি থমকে গেলেন এবং দেখলেন একটা কদম গাছ, যা তিনি এত দিন লাগানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। গাছটি এখনো আছে বলে আমার ধারণা। গাছটা কেউ লাগায়নি, উনার চাওয়া ছিল একটা কদম গাছ ন্যাচার উনাকে গাছটা উপহার দিয়েছে। এমন নানাবিধ জিনিস উনি পেয়েছেন ন্যাচারের কাছ থেকে। যেটাকে আমরা সাধারণ লজিক নিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারব না। সেই লজিকগুলো উনি উনার চরিত্রের মাঝে নিয়ে এসেছেন। এই ব্যাপারগুলো আমি আগে কখনো শেয়ার করেনি।
হুমায়ূন আহমেদকে রিয়াজের না বলা কথা
উনার সঙ্গে আমরা খুব ফ্রি ছিলাম। উনাকে আমরা অনেক শ্রদ্ধা করতাম, ভালোবাসতাম। উনার মত করে সব কথা বলার সাহসও রাখতাম না অনেকেই। তবে কিছু মানুষের উনি সেই অধিকার উনি দিয়েছিলেন, তাঁর মধ্যে আমি ভাগ্যবান। আমার সেই অধিকার ছিল। উনি চাইতেন উনার ভুলগুলো আমরা বলি। সেই জায়গা থেকে আমাদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা উনার সঙ্গে শেয়ার করতাম। আর এমন কনো কথা নেই জীবিত অবস্থায় তাঁকে বলতে চেয়েছিলাম। হয়তো জীবিত অবস্থায়, স্যার আমি আপনাকে ভালবাসি এটা কখনো বলা হয়নি। কিন্তু আমাদের কাজে, আভাসে ফুটে উঠত। যেমন উনি যখন আমাকে ডাকতেন, সব কাজ ফেলে আমি ছুটে যেতাম। উনার ডাককে আমি কখনো অবজ্ঞা বা অবহেলা করতে পারতাম না। এ ছাড়া উনার ডাকে আমি যখন নুহাস পল্লীতে যেতাম, যত রাত হোক উনি আমার জন্য বাইরে পাইচারি করতেন, সুস্থ মত না পৌঁছানো পর্যন্ত উনি ঘুমাতেন না। আর হয়তো শুটিং করতে ভাল লাগছে না উনাকে বললেই হতো উনি বলতেন চলো আজ শুটিং অফ করি, গল্প করি, মাছ ধরি।