২৫ লাখ টাকা পৌঁছে যাবে অনন্তর ১২৫০ ভক্তের মোবাইলে
সারা বছরই নানা সামাজিক কাজে যুক্ত থাকেন নায়ক-প্রযোজক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অনন্ত জলিল। করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে চলচ্চিত্রের শিল্পী-কলাকুশলী ছাড়াও মধ্যবিত্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। প্রতি ঈদেই ফিতরা দিয়ে থাকেন, তবে সারা দেশে করোনায় মানুষের সমস্যার কথা চিন্তা করে এবার ঈদে দিচ্ছেন সর্বোচ্চ ফিতরা।
ফিতরার একটি অংশ অনন্ত জলিল দিচ্ছেন তাঁর অসচ্ছল ভক্তদের। শুরুতে ৫০০ ফ্যানকে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন, আবেদন বেশি পড়ায় তা বাড়িয়ে ২০ লাখ করেন। তবে গতকাল যাচাই-বাছাই করার সময় দেখেন, আবেদন পড়েছে ১৬ হাজারের বেশি। পরে এক হাজার ২৫০ জন অসচ্ছল ভক্তকে ২৫ লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বাছাইকৃতদের মোবাইলে আজ বুধবার (২০ মে) চলে যাবে ২৫ লাখ টাকা। যাঁদের টাকা দিতে পারছেন না, তাঁদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন অনন্ত।
এনটিভি অনলাইনকে অনন্ত জলিল বলেন, ‘আজ দুপুর থেকে ২৫ লাখ টাকা পাঠানো হবে এক হাজার ২৫০ জন ফ্যানের মোবাইলে। আমি মন থেকে চাইছি, যত জনই আমাকে অ্যাপ্লিকেশন করেছেন, তাঁদের সবাইকে সাহায্য করি। কিন্তু এই মুহূর্তে তা আমার সামর্থ্যের বাইরে। আপনারা সবাই জানেন, আমি শুধু গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। আমার দ্বিতীয় কোনো ইনকাম সোর্স নেই। গত দুই মাস করোনা মহামারিতে অনেক শিপমেন্ট বাতিল হয়ে গেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসিয়ে বেতন দিতে হয়েছে। আমি আমার জায়গা থেকে নিঃস্বার্থভাবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি মানুষকে সহযোগিতা করতে। তাই আপনারা আমাকে মন থেকে ক্ষমা করে দেবেন, আমি সত্যিই অনেক কষ্ট পাচ্ছি সবাইকে সহযোগিতা করতে না পারার জন্য।’
কীভাবে এক হাজার ২৫০ জনকে বাছাই করা হয়েছে—জানতে চাইলে অনন্ত বলেন, ‘আমার ফ্যাক্টরিতে ১০ জনের একটি স্পেশাল টিম গঠন করে দিয়েছিলাম। যারা গত দুদিন ১৬ হাজারের বেশি অ্যাপ্লিকেশন যাচাই-বাছাই করছেন। আমার টিম প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলে পরিবারের খবর নেন, সেখান থেকে যারা ফিতরা পাওয়ার যোগ্য, তাদের মধ্যে এক হাজার ২৫০ জনকে চিহ্নিত করে। আমি নিজে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছি, যেন সঠিক মানুষটি ফিতরার টাকাটা পান।’
আক্ষেপ করে অনন্ত বলেন, ‘আমি বারবার ভাবছিলাম, ইশ, আমার কাছে যদি আলাদিনের চেরাগ থাকত! আমি সেই চেরাগের ভেতরের দৈত্যকে বলতাম সবার বাসায় যেন খাদ্যসামগ্রী ও টাকা পৌঁছে যায়। সেই দৈত্য যদি সমস্যায় পড়া সবার বাসায় এসব পৌঁছে দিত, তাহলে মন থেকে শান্তি পেতাম। প্রতিটি সচ্ছল মানুষ যদি একজন অসচ্ছল মানুষকেও সহযোগিতা করত, তবে আমাদের দেশে এত সমস্যা থাকত না। আমি বিত্তবানদের অনুরোধ করছি, তাঁরা যেন তাঁদের পাশের দুস্থ মানুষকে সহযোগিতা করেন।’
দোয়া চেয়ে অনন্ত বলেন, ‘আমার জন্য আমার পরিবারের জন্য, আমার ফ্যাক্টরির সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য দোয়া করবেন। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হবেন না। সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই আমাদের এই মহামারি থেকে রক্ষা করবেন।’
অনন্ত জলিল সামাজিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে তিনটি এতিমখানা নির্মাণ করেছেন। মিরপুর ১০ নম্বর, বাইতুল আমান হাউজিং ও সাভার মধুমতি মডেল টাউনে আছে এতিমখানাগুলো। এ ছাড়া সাভারের হেমায়েতপুরের ধল্লা গ্রামে সাড়ে ২৮ বিঘার ওপর একটি বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন অনন্ত জলিল। তিনি ঢাকার হেমায়েতপুরে অবস্থিত বায়তুস শাহ জামে মসজিদের নির্মাণকাজেও অবদান রাখেন।
চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, নায়ক ও ব্যবসায়ী এম এ জলিল অনন্ত, যিনি চলচ্চিত্রে অনন্ত জলিল নামে পরিচিত। ২০১০ সালে ‘খোঁজ—দ্য সার্চ’ সিনেমার মাধ্যমে ঢালিউডে যাত্রা শুরু করেন। গার্মেন্টস ব্যবসার পাশাপাশি চলচ্চিত্রে বিনিয়োগ করেন নিজের প্রযোজনা সংস্থার মাধ্যমে।
এদিকে, সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে ঈদুল আজহায় মুক্তি পাবে অনন্ত জলিলের সিনেমা ‘দিন—দ্য ডে’। এটি নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ ও ইরানের যৌথ প্রযোজনায়। হলিউডি অ্যাকশন ধাঁচের এ সিনেমায় তাঁর সঙ্গে দেখা যাবে বর্ষাসহ ইরান-বাংলাদেশের অনেক শিল্পীকে।