সজল চোখে লাকী আখন্দকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/04/22/photo-1492842379.jpg)
জনপ্রিয় সুরকার, শিল্পী ও সংগীত পরিচালক লাকী আখন্দকে বৃষ্টিস্নাত সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাকী আখন্দের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তাঁর ভক্ত, স্রোতা ও শুভানুধ্যায়ীরা। শ্রদ্ধাঞ্জলীর আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
ঢাকা জেলার মেজিস্ট্রেট রবীন্দ্র চাকমার নেতৃত্বে গার্ড অব অনার শেষে প্রথমেই ফুলের শ্রদ্ধা জানান সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, সৈয়দ ইকবাল, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য গীতিকবি গাজী মাজহারুল আনোয়ার, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা আনিসুর রহমান মল্লিক, সাধারণ জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা, আওয়ামীলীগ নেতা শফী আহমেদ, মারুফা আক্তার পপি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, গণজাগরণ মঞ্চের নেতা কামাল পাশা চৌধুরী শ্রদ্ধা জানান।
সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে শিল্পী ফকির আলমগীর, খোরশেদ আলম, তিমির নন্দী, খুরশিদ আলম, আখরামুল ইসলাম, নকীব খান, আসিফ ইকবাল, বেলাল খান, কাজী হাবলু, ফুয়াদ নাসের বাবু, গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়েজী, গীতিকবি কবির বকুল, জলের গানের সাইফুল জার্নাল, লেখক নাট্যকার শাকুর মজিদ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এছাড়া এনটিভি পরিবার, নাট্যসংগঠন প্রাচ্যনাট, শিল্পীত, ঋষিজ, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, জাসাস, খেলাঘর প্রভৃতি সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
আয়োজক সংগঠনের পক্ষে গোলাম কুদ্দুছের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষ হয়। এরপর তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন স্বরূপ ১ মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।
শ্রদ্ধাঞ্জলি শেষে আসাদুজ্জামান নুর বলেন, ‘এদেশে শিল্পী সমাজ ভুলতে পারবে না। গানকে কীভাবে মানুষের কাছে পৌঁছাতে হয় তা তিনি শিখেছিলেন। তার এই অর্জনকে আমরা সংরক্ষণ করতে চাই। সংরক্ষণের মধ্যে দিয়েই তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবো। একজন শিল্পী, দেশপ্রেমিক, মুক্তিযোদ্ধাকে চিরদিন এদেশের শিল্পী সমাজ মনে রাখবে। মনে রাখতে বাধ্য হবে।’
সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, ‘৭২, ৭৩,৭৪ এ তিনি বাংলা আধুনিক গানের অসাধারণ সুর করেছিলেন। এ ধরনের ব্যক্তিদের যথাযথ মূল্যায়ন হওয়া উচিৎ।’
গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, ‘লাকী আখন্দ সঙ্গীত জীবনের চমক। আমরা এক সঙ্গে কাজ করেছি। বয়স তাঁকে শান্তিতে থাকতে দেয় নি। কিন্তু গানের জীবনে কিন্তু তিনি নতুনত্বের স্বাদ পেয়েছি। তিনি দিয়েছেন।’ এসময় তিনি প্রত্যেক শিল্পীর মূল্যায়ন যেন হয় সে আহবান জানান।
তিনি বলেন, সরকার আসবেন, সরকার যাবেন। রাজনীতির ক্ষেত্রে ভিন্নতা থাকতে পারে দেশের ক্ষেত্রে কোনো ভিন্নতা থাকতে পারে না। এসব মানুষকে দলের বাইরে চিন্তা করে মূল্যায়নের জন্যও আহবান জানান খ্যাতিমান শিল্পী।
সঙ্গীতশিল্পী খুরশিদ আলম বলেন, ‘লাকীর মতো শিল্পী চলে গেল, সেই ক্ষতি পূরণ হওয়ার মতো নয়। আর তরুণ গায়কদের বলব, তারা যখন লাকীর গান কোথাও গাইবেন, তখন যেন তাঁর নাম উল্লেখ করেন।’
নকীব খান বলেন, ‘আধুনিক বাংলা গানের এক ভিন্ন ধারার জন্ম দিয়েছিলেন লাকী আখন্দ। আমি তাঁর গান প্রথম শুনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে। সে গানে অনুপ্রাণিত হই- কী গানে কী দেশপ্রেমে! সেই গানটি ছিলো 'জন্মভূমি বাংলা মাগো। চলচ্চিত্র অঙ্গনের বাইরে এত জনপ্রিয় গান আর কেউ আমাদের উপহার দিতে পারেন নি কিন্ত আমরা তাঁর সঠিক মূল্যায়ন করতে পারিনি।’
গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘আজ তাঁকে বাঙালির শ্রেষ্ঠ স্থান শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালাম। বিদায় জানালাম। আসলে তাদের কী বিদায় জানানো যায়! যায় না! এই লাল সবুজ পতাকার মতই তনি তিনি বেঁচে থাকবেন।’
পিতা সম্পর্কে মাম-মিনতি বলেন, ‘আমার বাবা দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন, গান দিয়ে মানুষের মনে আনন্দ দিয়েছে। তাঁর যদি কোনো ভুল ত্রুটি থাকে তবে ক্ষমা করবেন, আমার মা বাবার জন্য দোয়া করবেন।’