বাবার জন্য দোয়া চাইলেন সোহেল আরমান
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বাংলাদেশের অভিনেতা ও নির্মাতা আমজাদ হোসেন। গত ২৭ নভেম্বর রাত আড়াইটার দিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে ব্যাংকক নিয়ে যাওয়া হয়।
আজ দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে আমজাদ হোসেনের ছেলে সোহেল আরমান নিজের ফেসবুকে বাবার অবস্থা জানিয়ে লেখেন, ‘বাবার চিকিৎসা চলছে। হার্টবিট আর ব্লাডপ্রেশার ডাক্তাররা অনেক চেষ্টায় কিছুটা স্বাভাবিক রাখতে পেরেছেন। এখন কিডনি ইনফেকশনের জন্য ডায়ালাইসিস চলছে। আরো কিছু জটিল সমস্যা নিয়ে ডাক্তাররা এখনো নিরলস পরিশ্রম করছেন নিয়ন্ত্রণে আনবার।’
‘আমাদের দুই ভাইকে নিয়ম করেই খবর দিয়ে যাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সহজেই বাবাকে দেখতে আইসিইউতে অনুমতি পাওয়া যায় না। খুব দেখতে ইচ্ছে হয় বাবাকে। কিন্তু ভালোর জন্য দূরেই আমরা দুই ভাই অপেক্ষমাণ। যদি এমন হতো... হঠাৎ বাবা ডাকছে... এই নিউ... এই দোদুল
চল আজ তোদের নিয়ে পুরো ব্যাংকক ঘুরব... বল কী কী খাবি... নির্ঘাত বড় ভাইয়ার সঙ্গে লেগে যেত, কারণ ভাইয়াই উল্টো বলত... আপনি কী খাবেন সেটা বলেন… আমরাই আপনাকে ঘুরতে নিয়ে যাব.. আমরাই খাওয়াব।
বাবা মুচকি হাসতেন... আর একটা কথাই বলতেন,
আচ্ছা চল। এভাবেই অতীতের হাজার লক্ষ স্মৃতি ঘিরে ধরছে অশ্রুসিক্ত আমাদের দুই ভাইকে। আপনারা সবাই দোয়া করবেন বাবার জন্য। মিরাকল তো হতেই পারে।’
দেশবরেণ্য অভিনেতা ও নির্মাতা আমজাদ হোসেনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২০ নভেম্বর মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন আমজাদ হোসেনের দুই ছেলে সোহেল আরমান ও সাজ্জাদ হোসেন দোদুল। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক।
গত ১৮ নভেম্বর রোববার সকাল ৯টার দিকে আমজাদ হোসেনের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার তাঁকে (আমজাদ হোসেন) বিছানার নিচে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। কখন তিনি অচেতন হয়েছেন, তা আঁচ করতে পারেননি সুরাইয়া আক্তার। এরপর সকাল ১০টার দিকে তাঁকে ইমপালস্ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন গত রোববার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় আমজাদ হোসেনের।
আমজাদ হোসেন অভিনেতা, পরিচালক হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। ১৯৬১ সালে ‘হারানো দিন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় দিয়ে চলচ্চিত্র শুরু করেন তিনি। পরে চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনা শুরু করেন।
প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ছবিটি পরিচালনা করেন ১৯৬৭ সালে। পরিচালক হিসেবে ‘নয়নমনি’ (১৯৭৬), গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮), ভাত দে (১৯৮৪) তাঁর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র।
‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ও ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করেন। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক (১৯৯৩) ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।
এ ছাড়া সাহিত্য রচনার জন্য তিনি ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে দুবার অগ্রণী শিশু সাহিত্য পুরস্কার ও ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।