চলচ্চিত্র ধ্বংস করছে নকল ছবি
‘মূল ধারার চলচ্চিত্রে একটা মেধাশূন্যতা দেখা দিয়েছে অনেক আগে থেকেই। যে কারণে অনেকেই নকল, মানহীন চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন। মৌলিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করার জন্য মেধা প্রয়োজন। এসব নকল চলচ্চিত্র আমাদের সিনেমা হলের বাজার নষ্ট করছে। বর্তমানে যে কয়েকটি চলচ্চিত্র ব্যবসাসফল হয়েছে, সেগুলো মূল ধারার চলচ্চিত্র নয়।’ বর্তমান সময়ের চলচ্চিত্রের দুরব্স্থা নিয়ে কথাগুলো বলেন পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম।
দেশি চলচ্চিত্র নির্মাণ ও মুক্তির সংখ্যা দিন দিন কমছে। একসময় অশ্লীলতাকে দায়ী করলেও বর্তমান অবস্থানের জন্য অনেকেই দায়ী করছে নকল ও মানহীন চলচ্চিত্রকে। বড় বাজেটের চলচ্চিত্রগুলোতে নকলে প্রবণতা একটু বেশিই দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সিনেমা হল মালিক সমিতির সভাপতি ও মধুমিতা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘গল্প নিয়ে এখন আর কেউ সময় দিতে চায় না। কিসের যেন ব্যস্ততা পরিচালকদের। ছবির গল্প নকল করছে, গান নকল করছে, পারলে সেই ছবির ডান্স ডিরেক্টর দিয়ে গান করাচ্ছে, তার মানে পুরোটাই নকল করছে। মোবাইলে আসল ছবিটি দেখে দেখে শট নিচ্ছে। সিনেমা হলে মুক্তিও দিচ্ছে। শিল্পীদের ফ্যানরা এসে আগ্রহ নিয়ে ছবি দেখছে। ফ্যান বলে কথা, প্রিয় তারকার বিপক্ষে কথাও বলতে পারছে না। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা সিনেমা হল মালিকরা। কারণ এসব ছবি চলছে শুক্র-শনি দুদিন। রোববার থেকে সিনেমা হল দর্শকশূন্য। শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বড় বাজেটের ছবিতে নকলের প্রবণতাটা একটু বেশি দেখা যাচ্ছে।’
গল্প নিয়ে নওশাদ বলেন, ‘আরেকটি সমস্যা হচ্ছে টাকা দিয়ে গল্প কিনতে চায় না। চার কোটি টাকা দিয়ে ছবি নির্মাণ করবেন, দুই লাখ টাকা দিয়ে গল্প তৈরি করতে পারবে না। অথচ কাজী জহিরদের দেখেছি স্ক্রিপ্টরাইটারদের পাঁচতারকা হোটেলে রেখে চিত্রনাট্য করত, সময় দিত গল্পের জন্য। দর্শকও দেখত ছবি, আমরাও সিনেমা হল চালাতে পেরেছি।’
নওশাদ আরো বলেন, ‘যদি ভারতের ছবিই নকল নির্মাণ করবেন, তবে আমরা ভারতের আসল ছবিটি দেখালে সমস্যা কী। আসলে অনেকেই বিরোধিতা করছেন, কারণ তারা নিজেরা ধরা খেয়ে যাবে। অনেকেই আছে যারা সারা জীবন নকল ছবি নির্মাণ করেছেন, তারা তো সিনেমার গল্প খুঁজে পাবেন না।’
কাকরাইলে অবস্থিত রাজমণি সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘যারা সিনেমা হলে এসে ছবি দেখেন, তারা সবাই টিভি দেখেন। দেশি টিভি চ্যানেলের চেয়ে ভারতের চ্যানেলগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। ভারতের অনেক টেলিভিশন আছে, যেখানে তাদের সিনেমাগুলো দেখানো হয়। এমন চ্যানেলও আছে, যেখানে ছবি মুক্তি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে দেখিয়ে দেয়। আবার প্রতিদিন তারা একাধিক সিনেমা দেখান। একেকটা ছবি হাজারবার দেখার পর মানুষ ছবির গল্প মুখস্থ করে ফেলে। এসব নকল ছবি যখন দর্শক দেখেন, তখন বিরক্ত হয়ে বের হয়ে যান। প্রিয় শিল্পীকে যখন নকল গল্পের ছবিতে দেখেন, তখন মন খারাপ করেন। যে কারণে এখন দিন দিন দর্শক কমছে, হল কমছে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চলচ্চিত্র। অবাক লাগে এই পরিচালকরাই যখন বড় মুখ করে কথা বলেন।’