শুটিং সন্দেশ
বিজয় দিবসে আসছে ‘দমকা হাওয়া’
দুপুর গড়িয়ে বিকেল। আর দিনের এই শেষবেলায় শাহেদ শরীফ খান ও নাজিরা আহমেদ মৌ দুজন পাশাপাশি চেয়ারে বসে গল্প করছেন। তাঁদের একমাত্র মেয়ে অপরূপাকে নিয়ে তাঁরা দুজন অনেক ভাবছেন। কিন্তু কী ভাবছেন তাঁরা? এটা জানতে হলে চয়নিকা চৌধুরীর পরিচালনায় নাটক ‘দমকা হাওয়া’ দেখতে হবে। আসছে বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুরের সফিপুরে রাঙামাটি রিসোর্ট শুটিংস্পটে এই নাটকের শুটিং করছিলেন পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী। নাটকটি প্রযোজনা করেছে এসবি প্রোডাকশন।
নাটকে শাহেদ ও মৌ ছাড়া একাত্তরের বীরাঙ্গনা চরিত্রে অভিনয় করছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী তমালিকা কর্মকার। অভিনেতা কল্যাণকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে এ নাটকে। চরিত্রের প্রয়োজনে দুই রকম গেটআপে দেখা যাবে তমালিকা কর্মকারকে। নাটকের প্রথম দৃশ্যগুলোতে তরুণী ও শেষের দিকে বয়স্ক এক নারীর চরিত্রে তমালিকাকে দেখতে পাবেন দর্শক। তাই তাঁর মেকআপে রয়েছে অনেক ভিন্নতা। এদিকে, এই নাটকের মাধ্যমে দীর্ঘ আট বছর পর একসঙ্গে ছোট পর্দায় অভিনয় করছেন তমালিকা ও শাহেদ। এমনটিই জানালেন শাহেদ।
এ প্রসঙ্গে শাহেদ বলেন, ‘নিঃসন্দেহে তমালিকা দিদি অসাধারণ একজন অভিনেত্রী। দীর্ঘদিন পর তাঁর সঙ্গে কাজ করলেও তেমন কোনো পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছি না। তিনি আগের মতো প্রাণবন্ত।’
নাটকটি যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের গল্পকে ঘিরে, তাই অভিনয়ের ভিন্ন স্বাদ পাচ্ছেন শাহেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা তো যুদ্ধ দেখতে পারিনি, তাই করারও সৌভাগ্য হয়নি। যেহেতু আমি একজন অভিনেতা, তাই এ ধরনের চরিত্রে কাজ করতে এসে মনে হচ্ছে, যাক! দেশের জন্য তো এতটুকু করতে পেলাম।’
এদিকে, বিশেষ দিবস ছাড়াও অন্য নাটকের নির্দেশনা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী। ঢাকা থেকে সুদূর সফিপুরে এখন নিয়মিতই শুটিং করেন তিনি। এখানে তিনি মোট ১৮টি নাটক নির্মাণ করেছেন। জায়গাটি কেন এত পছন্দ চয়নিকা চৌধুরীর? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় তো অনেক নাটকই নির্মাণ করেছি। আর এই রিসোর্টে শুটিং করা ব্যয়বহুল হলেও আমার ভালো লাগে, কারণ এখানকার পরিবেশ আলাদা ও অসাধারণ। চারদিকে সবুজ অরণ্য, সুইমিংপুল। এ ছাড়া এখানকার কটেজগুলো দেখতে ভারি সুন্দর। একটা নাটক নির্মাণে অভিনেতাদের অভিনয়শৈলী ও গল্প যেমন চমৎকার হওয়া প্রয়োজন, ঠিক তেমনি লোকেশনটাও সুন্দর হওয়া চাই। সবকিছুর সুন্দর সমন্বয়ে একটা ভালো নাটক নির্মাণ করা সম্ভব হয়। আমি সব বিষয়ে নজর দেওয়ার চেষ্টা করি।’
আলাপ সবেমাত্র জমে উঠেছে। এ মুহূর্তে সহকারী পরিচালক এসে চয়নিকা চৌধুরীকে বললেন, ‘আপা, লাইট ক্যামেরা রেডি।’ এটা শুনে পরিচালক ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। সে সঙ্গে নাটকের শিল্পীরাও। অভিনেত্রী মৌ দ্রুত সিঁড়ি থেকে নামতে গিয়ে হঠাৎ একটা কুকুর দেখে ভয়ে চিৎকার করতেই শাহেদ পেছনে ফিরে তাকালেন। এরপর মৌ হাসিমুখে বলেন, ‘কুকুর আমাকে দৌড়ানি দিলে সবাই আমাকে রেখেই পালত। কারণ, আমার স্বামী তো এখানে নকল। তাই না!’
মৌয়ের এই কথা শুনে শাহেদসহ ইউনিটের সবাই হেসে দিলেন। এদিকে তাঁরা শট শুরু করলেও সকাল থেকে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন অভিনেতা কল্যাণ। কারণ জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বললেন, ‘আমার দৃশ্যগুলো রাতে ধারণ করা হবে।’
ক্যামেরা আবার চালু হওয়ার আগে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিলাম। গাড়িতে উঠে কটেজ পার হওয়ার সময় দূর থেকে আমরা শুনতে পেলাম পাখির কিচিরমিচির শব্দ।