মিথিলার রূপ, মিথিলার রূপকথা
দৃশ্যপট এক : মধ্যবিত্ত পরিবারের অতি সাধারণ এক মেয়ে। পড়াশোনা করেন ঢাকায়, এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রীমেসে থাকেন গাদাগাদি করে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, দিনশেষে রুমে ফেরা—এটাই তাঁর নিত্যদিনের ছক।
দৃশ্যপট দুই : আলো ঝলমলে জীবন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। অভিজাত এলাকা উত্তরার ফ্ল্যাট। মাঝেমধ্যে ক্লাসে যাওয়া। পড়াশোনার ফুরসত না পাওয়া, দেরিতে বাসায় ফেরা, গভীর রাতে ঘুমাতে যাওয়া, আবার সকালে উঠেই ঝটপট সেজে বের হওয়া, অতঃপর মঞ্চ-লাইট-ক্যামেরা-ক্যাটওয়াক, এরই মাঝে কোনোরকমে সময় বের করে আবার ঘরে ফেরা।
দুটি দৃশ্য। বিপরীত জীবন। একেবারে যেন আকাশ-পাতাল। তবে বাস্তবতা হলো, দুই দৃশ্যের চরিত্রটি একই। মাঝখানে শুধু আড়াই মাসের ফারাক।
হ্যাঁ, কথা হচ্ছে সুমাইয়া আঞ্জুম মিথিলার। ভিট-চ্যানেল আই টপ মডেল ২০১৪। রূপকথার গল্পের মতোই বদলে গেছে যাঁর জীবন। যেন বাস্তবের এক সিনডেরেলা। চোখ-ধাঁধানো রূপ, জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর বাসনা, এর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা তাঁকে স্বপ্নময় একটি জায়গায় নিয়ে এসেছে। গত ২৩ জানুয়ারি টপ মডেলের মুকুট পরেন গাজীপুরের এই মেয়ে।
এখন তাঁকে ঘুমাতে যাওয়ার আগেই ভেবে রাখতে হয়, সকালে কোন শুটিং, কোথায় যাবেন, কী কী করবেন! মডেলিং, ফ্যাশন শো, নাটক-টেলিফিল্মে অভিনয়, পত্রিকা-ম্যাগাজিনের জন্য ফটোশুট—এমন সব ব্যস্ততায় দিন কাটে তাঁর। আবার এর মধ্যেই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পড়াশোনা, বন্ধুদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড়, শপিংমলে গিয়ে কেনাকাটা।
দুদিন আগে উত্তরার দিয়াবাড়ি শুটিং স্পটে দেখা হয় মিথিলার সঙ্গে। সেখানেই নিজের বদলে যাওয়া জীবনের গল্প শোনালেন তিনি। এটা কি স্বপ্নের মতো নয়? প্রশ্নটা করতেই মিথিলা বললেন, ‘এটা সত্যিই স্বপ্নের মতো। প্রথম প্রথম সেটাই মনে হতো। তবে এখন কাজের এত চাপ যে মনে হয়, বাস্তবেই আছি।’
মিথিলার বাবা চাকরি করেন, মা গৃহিণী। একমাত্র বোনটি পড়ে নবম শ্রেণিতে। মিথিলা জানান, স্কুলে পড়ার সময়ই তাঁর মডেল হওয়ার স্বপ্ন ছিল। পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে কোনো মডেলের ছবি দেখলে, টিভিতে কোনো ফ্যাশন শো দেখলে সেই স্বপ্ন আরো বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠত। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে বলতেন, ‘আমাকেও একদিন এমন হতে হবে। আজ আমি যেমন এই মডেলদের দেখছি, একদিন আমাকেও সবাই দেখবে।’
‘তখন শুধু ভাবতাম, কিন্তু কোনো উপায় ছিল না। স্বপ্নপূরণের সেই আকাঙ্ক্ষা থেকেই ভিট-চ্যানেল আই টপ মডেল প্রতিযোগিতায় নাম লেখাই। এর পর তো আপনারা সবই দেখেছেন’—যোগ করেন মিথিলা।
মিথিলার স্বপ্ন শতভাগ সত্যি হয়েছে। নিয়মিত মডেলিং করছেন, পত্রিকা-ম্যাগাজিনে তাঁর ছবি ছাপা হচ্ছে, ফ্যাশন শো-ও করছেন। সম্প্রতি রাজধানীর র্যাডিসন হোটেলে ভারতীয় পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ডেনিমের ফ্যাশন শোতে র্যাম্পে হাঁটেন মিথিলা। প্রথমবারের মতো র্যাম্পে হাঁটার অনুভূতি জানতে চাইলে মিথিলা বলেন, ‘সেটা ঠিক ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। অন্য রকম লাগছিল আমার। মনে হচ্ছিল, যেন স্বপ্নের মধ্যে হাঁটছি।’
মিথিলা জানান, তিনি গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুল থেকে মাধ্যমিক আর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। এখন শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন মার্চেন্ডাইজিং বিষয়ে।
পড়াশোনা শেষে থাকতে চান অভিনয় নিয়েই। মিথিলা বললেন, ‘আমি অভিনয়কেই পেশা হিসেবে নিতে চাই। পাশাপাশি মডেলিংও করব।’
তারকা খ্যাতি পাওয়ার পর ব্যস্ততা সম্পর্কে মিথিলা বললেন, “ভিট প্রতিযোগিতায় সেরা মডেল হওয়ার পর দুই মাসে ‘প্রজন্ম’ ও ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ নামে দুটি টেলিফিল্ম করেছি। দুটিই টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে। ‘প্রজাপতি সেন’ নামে আরেকটি টেলিফিল্মে এখন কাজ করছি। খুব শিগগির ৬০ পর্বের একটি ধারাবাহিক নাটকে কাজ শুরু করতে যাচ্ছি।”
নিজের পারফরম্যান্স সম্পর্কে মিথিলার মূল্যায়ন, ‘প্রথম নাটকের পর আমার মনে হয়েছে, দ্বিতীয় নাটকে আরো ভালো করেছি। দ্বিতীয় নাটকের পর মনে হচ্ছে, ইনশাআল্লাহ তৃতীয় নাটকে আরো ভালো করব।’
মিথিলা বললেন, ‘আগে সপ্তাহে দুই-একবার বাড়ি যেতাম। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে এখন খুব একটা যাওয়া হয় না। সেরা মডেল হওয়ার পর একবার গিয়েছিলাম। সেখানে যাওয়ার পর তো ভিড় জমে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল, আমাকে যেন সবাই প্রথম দেখছে। সবাই আমাকে একনজর দেখতে চাইছিল, কথা বলতে চাইছিল।’ সেই অবস্থা এখনো আছে জানিয়ে বললেন, ‘অনেকেই এখনো আম্মুকে ফোন করে বলে, আপনার মেয়ে বাসায় এলে জানাবেন। ওকে একবার দেখব। আমি আগে খুব সাধারণ একজন মেয়ে ছিলাম। কিন্তু এখন মনে হয়, কিছু একটা হয়েছি। আমার সঙ্গে কথা বলতে পারলে লোকে হ্যাপি (সুখী) হচ্ছে। ক্লাসের বন্ধুরাও আমাকে দেখলে বলে, সেলিব্রেটি এসেছে, সেলিব্রেটি এসেছে। এটা অনেক বড় পাওয়া।’