২০০০ পর্ব পার করেছে ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/04/09/photo-1428575954.jpg)
আজ ৯ এপ্রিল, বুধবার, সকাল সাড়ে ৮টায় এনটিভির স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’-এর ২০০০তম পর্ব প্রচারিত হয়েছে। এ উপলক্ষে করা হয়েছিল বিশেষ আয়োজন। ২০০৯ সালের ১৫ জুন শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানটি প্রতিদিন সকালে এনটিভিতে প্রচারিত হয়ে আসছে এবং এটি এরই মধ্যে অর্জন করেছে জনপ্রিয়তা।
করে তুলছে স্বাস্থ্যসচেতন
৫ এপ্রিল বিকেল ৪টা। এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০০০তম পর্বের শুটিং চলছে। ২০০০তম পর্বের শুটিং, তাই সবার মধ্যে এক অন্যরকম উত্তেজনা কাজ করছে। শুটিংয়ের এক ফাঁকে কেক কাটা হবে। বিশেষ অতিথি হিসেবে এসেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান। তিনিও বেশ আনন্দিত সবার আয়োজন দেখে। শুটিংয়ের এক ফাঁকে কথা হয় অনুষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে।
অধ্যাপক ডা. এম আর খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, “এনটিভির স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ বেশ জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান। আমি প্রায়ই এই অনুষ্ঠান দেখি। এটি আজ ২০০০তম পর্বে প্রবেশ করেছে তাই এর জন্য রইল শুভকামনা। টেলিভিশনের এসব স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান মানুষকে স্বাস্থ্যসচেতন করতে ভূমিকা রাখে।”
ডা. খান আরো বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিষয়ক এ ধরনের অনুষ্ঠান যত আকর্ষণীয় হবে, প্রাণবন্ত হবে, মানুষ এসব অনুষ্ঠান দেখতে তত আগ্রহী হবে। এই অনুষ্ঠানের একটি ভালো বিষয় হলো নিয়মিত কিছু ব্যায়াম শেখানো হয়। আগে আমরা ব্যায়াম শেখার জন্য বিখ্যাত বডিবিল্ডার বিজয় মল্লিকের কাছে যেতাম। তবে এখন ছেলেমেয়েদের আর এত কষ্ট করতে হয় না। তারা ঘরে বসে টেলিভিশনে এসব অনুষ্ঠান দেখে বেশ উপকৃত হতে পারে।’
টেলিভিশনের স্বাস্থ্যবিষয়ক এসব অনুষ্ঠান কীভাবে আরো ভালো করা যায় এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে ড. খান বলেন, ‘অনুষ্ঠানগুলো দৃষ্টিনন্দন হলে এবং যারা উপস্থাপন করে, তারা অনেক বেশি উপস্থাপনযোগ্য হলে অনুষ্ঠান দেখতে ভালো লাগে। শুধু চিকিৎসকই নন, সাহিত্যিক, অভিনয়শিল্পী এদেরও অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে আনতে পারলে ভালো হয়। কেননা স্বাস্থ্য তো সবার বিষয়। আর এসব ব্যক্তি অনুষ্ঠানে এলে সব ধরনের দর্শকও দেখার আগ্রহ পাবে।’
অনুষ্ঠানের গ্রন্থনাকারী ও উপস্থাপক ডা. সাখাওয়াৎ হোসেন সায়ন্থ জানান, ‘প্রায় পাঁচ বছর হলো এই অনুষ্ঠান চলছে। অত্যন্ত ভালো লাগার একটি অনুভূতি হচ্ছে। বাংলাদেশে সাধারণত স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান ভালোভাবে দেখানো হয় না। কিন্তু এই অনুষ্ঠানটি আমাদের ইন্টারন্যাশনাল টেলিভিশন চ্যানেল লিমিটেড (এনটিভির) চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী সাহেবের অত্যন্ত সুনজরে ছিল। যার জন্য আমরা এই অনুষ্ঠানটিকে ২০০০তম পর্ব পর্যন্ত আনতে পেরেছি। এটি বেশ বড় অর্জন।’
শুরুর কথা
ডা. সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, ‘আমি ১৯৯৪ সাল থেকে জাতীয় দৈনিকে কাজ করতাম। সেখানে সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে লেখালেখি করেছি। চিকিৎসাবিজ্ঞানে লেখাপড়া করার সময় আমার ইচ্ছা ছিল টেলিভিশন মাধ্যমে কাজ করার। তখন মনে হলো চিকিৎসা নিয়ে অনুষ্ঠান করলে আমি ভালো করতে পারব। সে জন্য এনটিভিতে আমার ভাবনার কথা জানাই। তখন একই সাথে ভালো লাগা ও ভীতি কাজ করছিল। প্রথম যেদিন অনুষ্ঠান করি, তখন ভয় পেয়েছিলাম এবং গলা শুকিয়ে এসেছিল। পরবর্তী সময়ে সেই ভীতি কাটিয়ে উঠে চেষ্টা করেছি সর্বোচ্চ ভালোটা দিতে। এনটিভিতে তখন কোনো স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান ছিল না। সেই হিসেবে আমার প্রস্তাবের পর কর্তৃপক্ষ এই অনুষ্ঠান করতে আগ্রহ দেখায়। তখন সেটি ছিল আমার টেলিভিশনে প্রথম উপস্থাপনা। অনুষ্ঠানটি বিষয় এবং মানের কারণে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখানে শুধুমাত্র চিকিৎসকদেরই সাক্ষাৎকার নেই না। পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অনেক কিছুই আমরা করি।’
অনুষ্ঠানের উপস্থাপক সাখাওয়াৎ আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানটি আমরা আরো অনেক দিন চালিয়ে নিয়ে যেতে পারব এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারব। অনুষ্ঠানে আমি ছাড়াও আরো অনেকের সম্পৃক্ততা ও সহযোগিতা ছিল, যার ফলে অনুষ্ঠানটি ভালো করা গেছে। শুরুতে প্রযোজক ছিলেন জাহাঙ্গীর চৌধুরী, বর্তমান প্রযোজক কাজী মোহাম্মদ মোস্তফা এবং সহ-উপস্থাপক সানজিদা হোসেন সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। এর আগে বিভিন্ন সময়ে উপস্থাপক ছিলেন সাকলায়েন রাসেল, ডা. তাহমিনা আক্তার মুনিয়া, তাঁদেরও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
প্রযোজকের কথা
অনুষ্ঠানের বর্তমান প্রযোজক কাজী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, ‘আমি মনে করি এটি একটি সামাজিক দায়িত্ব। ব্যক্তিগতভাবে এই অনুষ্ঠানটি আমাকে করতে দেওয়ায় আমি এনটিভির প্রতি কৃতজ্ঞ। এর মাধ্যমে সামাজিক কিছু দায়িত্ব পালন করা যায়। এই অনুষ্ঠানের প্রথম প্রযোজক জাহাঙ্গীর চৌধুরীর কাছে অনেক কৃতজ্ঞ আমি। এটি চেয়ারম্যান স্যারের একটি পছন্দের অনুষ্ঠান। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে এই অনুষ্ঠান অনেক জনপ্রিয়। এই অনুষ্ঠানে বাইরের দেশের চিকিৎসকরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধিরও চেষ্টা করি আমরা।’
প্রযোজক অনুষ্ঠান নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানান এভাবে, ‘মজার বিষয় হলো, সকালবেলা আমার ঘুম ভাঙে কারো না কারো ফোনের শব্দে। তারা আমার কাছে অনুষ্ঠানে আসা চিকিৎসকদের নাম্বার জানতে চায়।’
শুটিংয়ের এক ফাঁকে অনুষ্ঠানের সহ-উপস্থাপক ডা. সানজিদা হোসেন বলেন, ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানটিকে আমি আমার সন্তানের মতোই ভালোবাসি। তাই এর ২০০০ পর্ব প্রচারিত হওয়ায় ভীষণ আনন্দিত আমি। আমার শিশুর জন্মদিনে যে রকম আনন্দিত হই, এখানেও সেই রকম অনুভূতি হচ্ছে।’
২০০৯ সালের মাঝামাঝি থেকে এই অনুষ্ঠানে কাজ করছেন জানিয়ে ডা. সানজিদা বলেন, ‘আমি যখন প্রথম এই অনুষ্ঠানে কাজ করি, তখন অনুষ্ঠানের প্রযোজক জাহাঙ্গীর চৌধুরী ছিলেন। একজন উপস্থাপকের কেমন বাচনভঙ্গি হবে, কীভাবে তিনি নিজেকে ক্যামেরার সামনে উপস্থাপন করবেন সব কিছু তিনি শিখিয়ে দিতেন। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আর আমাদের বর্তমান প্রযোজক কাজী মোস্তফা ভাই, তিনি অসাধারণ একজন মানুষ। তিনি বন্ধুর মতো আমাদের পাশে থেকে কীভাবে সবচেয়ে সুন্দরভাবে কাজ করা যায় সেই ব্যাপারে সাহায্য করেন।’
এই অনুষ্ঠানে কাজ করতে পেরে খুব আনন্দিত জানিয়ে ড. সানজিদা বলেন, ‘আমি যেখানেই যাই, সেখানেই এই অনুষ্ঠানের কোনো না কোনো দর্শক পাই, অনুষ্ঠানের অনেক সাড়া পাই। অনেক মানুষ এই অনুষ্ঠান দেখে। এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।’
কী থাকে অনুষ্ঠানে
স্বাস্থ্য নিয়ে জনপ্রিয় এই অনুষ্ঠানটিতে প্রতিদিন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়। এখানে নির্দিষ্ট একটি রোগ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। রোগের ক্ষেত্রে এর কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয় না। চিকিৎসকের কাছে দ্রুত যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
চিকিৎসকের সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি প্রতিদিন শরীরচর্চাবিষয়ক একটি বিভাগ থাকে। এখানে ব্যায়ামের বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ও উপকার সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসাবিষয়ক বিভাগ ‘প্রাইমারি কেয়ার’, স্বাস্থ্যতথ্য নিয়ে বিভাগ ‘হেলথ টিপস’, খাদ্য পুষ্টিবিষয়ক বিভাগ ‘কী খাবেন কেন খাবেন’, ঔষধি গাছের গুণাগুণ ‘লতায় পাতায় ঔষধি গুণ’ ইত্যাদি প্রচারিত হয়।
পর্ব ২০০০ উদযাপন
আজকে এনটিভিতে প্রচারিত হওয়া স্বাস্থ্য প্রতিদিনের বিশেষ এই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত জাতীয় অধ্যাপক এম আর খান। আরো উপস্থিত ছিলেন, এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ, হেড অব সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং রঞ্জন কুমার দত্ত, হেড অব ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট মো. গোলাম রওশন ইজদানি, এনটিভির অ্যাসিসট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার স্টুডিও অপারেশন, ব্রডকাস্ট অপারেশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং খালিদ মুহাম্মদ সেজান। আরো ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রযোজক কাজী মোহাম্মদ মোস্তফা, গ্রন্থনাকারী ডা. সাখাওয়াৎ হোসেন সায়ন্ত এবং সহ-উপস্থাপক ডা. সানজিদা হোসেন।
অনুষ্ঠানটিকে দুটো পর্বে ভাগ করা হয়। প্রথম পর্বে ছিল অধ্যাপক ডা. এম আর খানের সঙ্গে ২০০০তম পর্ব নিয়ে আলাপচারিতা। দ্বিতীয় পর্বে ছিল কেক কাটা। এই পর্বে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং এনটিভির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।
কেক কাটার পর শুটিং শেষে স্বাস্থ্য প্রতিদিন পরিবারের সবাই মিলে বেশ মজা করে কেক খাওয়া হয়। স্বপ্ন দেখেন তাঁরা আরো দূর এগিয়ে চলার।