যে গিটার কিনতে পাগলামি করেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু
আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী এবং বিশ্বের অন্যতম সেরা গিটারবাদক। এই রক কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চুর জন্মদিন আজ। ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের পটিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন এই শিল্পী।
এনটিভির ‘আমার গিটার’ অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে নিজের গিটার নিয়ে পাগলামির গল্প শুনিয়েছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। জানিয়েছিলেন, তাঁর অধিকাংশ গিটার কেনা হয়েছিল আমেরিকা ও অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা থেকে।
তানিয়া হোসেইনের উপস্থাপনায় সেই অনুষ্ঠানে আইয়ুব বাচ্চু নিজের গিটারের গল্পে বলেছিলেন, ‘আমার অধিকাংশ গিটার আমেরিকা থেকে কেনা হয়েছে। কিছু কেনা হয়েছে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা থেকে। তবে সবগুলো গিটারের মধ্যে একটা গিটার হচ্ছে- ‘আমার রেয়ার কালেকশন। এই গিটার খুঁজতে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা গিয়েছিলাম আমি। যাইহোক সেখানকার গিটারের দোকানে গেলাম কিন্তু সেখানে গিটারটি পেলাম না। তারা আমাকে বলল, এটা এখান এতো কি.মি পথ পারি দিতে হবে অর্থাৎ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যতটুকু দূরত্ব, সেখানে গিটারটা পাওয়া যাবে। কিন্তু আমার সন্ধ্যায় শো ছিল। ওইখানে হাইওয়ে এবং ওয়ানওয়ে রাস্তা। দুই ঘণ্টার মধ্যে সেখানে পৌঁছানো সম্ভব। ওইখানে একজন ব্যক্তি গিটারটি বিক্রি করছে। পরে আমি ঠিকই সেখানে গেলাম। মিট করলাম। তিনি ছিলেন খুব ভালো একজন মানুষ। অল্প কথায় ওনি গিটারটি দিল, সেইসঙ্গে ক্যাশও নিল। পরে ওনি জিজ্ঞাসা করল তোমরা কোথা থেকে এসেছ। আমি বললাম ভিয়েনা শহর থেকে এসেছি। কিন্তু যেখান থেকে গিটারটি কিনেছি ওইটা ছিল গ্রাম। ওই গিটারটা কিনতে অনেক পাগলামি করেছি। যেটা আমি জীবনে কখনো ভুলবো না। সব গিটার ছেড়ে দিলেও এই গিটারটি আমি ছাড়বো না।’
আইয়ুব বাচ্চু ১৯৭৭ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডে গিটারিস্ট হিসেবে যোগ দেন। এরপর ১৯৮০ সালে ‘সোলস’-এ যোগদান করে টানা দশ বছর পারফর্ম করেছিলেন তিনি। এরপর নিজেই ১৯৯০ সালে ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’ গড়ে তোলেন। এটি পরবর্তীতে ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’ বা ‘এলআরবি’ নামে বিপুল খ্যাতি পায়।
একক শিল্পী হিসেবে আইয়ুব বাচ্চুর অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে-রক্তগোলাপ (১৯৮৬), ময়না (১৯৮৮), কষ্ট (১৯৯৫), সময় (১৯৯৮), একা (১৯৯৯), প্রেম তুমি কি! (২০০২), দুটি মন (২০০২), কাফেলা (২০০২), প্রেম প্রেমের মতো (২০০৩), পথের গান (২০০৪), ভাটির টানে মাটির গানে (২০০৬), জীবন (২০০৬), সাউন্ড অব সাইলেন্স (ইন্সট্রুমেন্টাল, ২০০৭), রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮), বলিনি কখনো (২০০৯), জীবনের গল্প (২০১৫)।
আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া অসংখ্য কালজয়ী গান রয়েছে। এগুলো মধ্যে- সেই তুমি, কষ্ট পেতে ভালোবাসি, এখন অনেক রাত, মেয়ে, কেউ সুখী নয়, হাসতে দেখোগাইতে দেখো, এক আকাশের তারা, ঘুমন্ত শহরে, রুপালি গিটার, উড়াল দেবো আকাশে, একচালা টিনের ঘর, তারাভরা রাতে, বাংলাদেশ, বেলা শেষে ফিরে এসে, আমি তো প্রেমে পড়িনি, আম্মাজান ও ফেরারি মন অন্যতম।
বাংলা গানের কিংবদন্তি গায়ক, গীতিকার, সুরকার ও গিটারবাদক আইয়ুব বাচ্চু ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে ‘রুপালি গিটার’ ফেলে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।