হলিউডে অর্ধেক চলচ্চিত্রে প্রধান ভূমিকায় নারীচরিত্ররা

সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউএসসি অ্যানেনবার্গ ইনক্লুশান ইনিশিয়েটিভের রিপোর্টে দেখা গেছে প্রায় ৫৪ শতাংশ বক্স-অফিস সফল সিনেমাতে নারীরাই প্রধান চরিত্র। হলিউডে নারীকেন্দ্রিক চরিত্রের কি প্রাধান্য বাড়ছে? গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৪-এর ১০০টিরও বেশি বাণিজ্যিকভাবে সফল (টপ গ্রসিং) চলচ্চিত্রের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের বেশিতে প্রধান অথবা মুখ্য পার্শ্ব চরিত্রের ভূমিকায় নারীদের দেখা গেছে। এই ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে দাবী করেছেন গবেষকরা।
সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউএসসি অ্যানেনবার্গ ইনক্লুশান ইনিশিয়েটিভের রিপোর্টে দেখা গেছে, প্রায় ৫৪ শতাংশ বক্স-অফিস সফল সিনেমাতে নারীরাই প্রধান চরিত্র। তার ঠিক আগের বছর, ২০২৩-এ এই চিত্র ছিল ৩০ শতাংশ। এই সমীক্ষা ২০০৭-এ শুরু হয়। তখন নারী চরিত্র-প্রধান বাণিজ্যিকভাবে সফল সিনেমার হার ছিল ২০ শতাংশ।
অ্যানেনবার্গ ইনক্লুশান ইনিশিয়েটিভের স্টেসি এল স্মিথ বলেন, ‘এই প্রথমবার আমরা বলতে পারি যে বাণিজ্যিকভাবে সফল সিনেমাতে লিঙ্গসাম্যতা বজায় থেকেছে।’ তিনি আরো জানান, ‘২০২৪-এ প্রথম পাঁচটির মধ্যে তিনটি সিনেমাতে এবং প্রথম ১০টির মধ্যে পাঁচটি সিনেমাতে নারী মুখ্য চরিত্র দেখা গেছে।’
স্মিথ মনে করিয়ে দেন ২০২৪ এর বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে সফল সিনেমা ডিসনির ইনসাইড আউট ২-এ মুখ্য চরিত্র এক কিশোরী। অন্যান্য সিনেমাগুলোর মধ্যে আছে সিন্থিয়া এরিভো-অভিনীত উইকেড, ডেমি মুর এবং মার্গারেট ক্যোলি-অভিনীত সাবস্ট্যান্স এবং আন্যা টেলর-জয়ের ফিউরিওসা: আ ম্যাড ম্যাক্স সাগা।
স্টুডিওতে লিঙ্গবৈষম্য
অন্যদিকে, হলিউডের স্টুডিওগুলোর মধ্যে লিঙ্গবৈষম্যের ছবি ধরা পড়েছে। ইউনিভার্সাল স্টুডিওর প্রায় ৬৬.৭ শতাংশ সিনেমাতে নারীদের মুখ্য চরিত্রে দেখা গেছে। সনি পিকচার্স এন্টারটেইনমেন্টের ক্ষেত্রে সেই হার ৩৮.৫ শতাংশ।
স্মিথ বলেন, ‘আমরা জানতাম নারী চরিত্র-প্রধান সিনেমা বাণিজ্যিকভাবে সফল হবে। তবে এই চিত্র হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া কোনো অর্থনৈতিক জাগরণের ফলও নয়। এর পিছনে একাধিক কারণ এবং বহুদিনের প্রচেষ্টা আছে। বিভিন্ন অ্যাডভোকেসি গ্রুপ, ডিইআই উদ্যোগ এবং স্টুডিওগুলোতে সচেতনতা প্রচারের ফলে আজ এই চিত্র দেখা যাচ্ছে।’
বর্ণবৈষম্যের বিবর্ণ চিত্র
অন্যদিকে, চলচ্চিত্রে নারী চরিত্রের প্রাধান্য বাড়লেও সান ডিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ উইমেন ইন টেলিভিশন অ্যান্ড ফিল্মের অন্য একটি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪-এ কথ্য ভূমিকায় নারীদের হার ৩৫ শতাংশ থেকে মাত্র ২৭ শতাংশ হয়েছে।
ইউএসসির রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, লিঙ্গবৈষম্য কমলেও বর্ণ বৈষম্যের চেহারাটা বিশেষ পাল্টায় নি। বরং ২০২৩ এর তুলনায় বৈষম্য খানিকটা বেড়েছে। ২০২৪-এ ১০০টির মধ্যে মাত্র ২৫টি সিনেমাতে শ্বেতাঙ্গ বাদ দিয়ে অন্য বর্ণের মুখ্য চরিত্র দেখা গেছে। ২০২৩-এ এই সংখ্যাটি ছিল ৩৭।
সেনসাস অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ৪১.৬ শতাংশ অশ্বেতাঙ্গ মানুষ বসবাস করেন। চলচ্চিত্র নির্মাণকারী কোনো স্টুডিওই সেই অনুপাতের ধারে কাছে যেতে পারেনি।
ইউএসসির রিপোর্টের মুখ্য গবেষক ক্যাথরিন নেফ বলেন, ‘এই বছরে চলচ্চিত্রে নারী-পুরুষ সমতা দেখা গেলেও অশ্বেতাঙ্গ নারীদের এগিয়ে আনার ক্ষেত্রে আরো অনেক কাজ করতে হবে।’