জংলি মুভি রিভিউ
প্রাপ্তির সঙ্গে তৃপ্তির মেলবন্ধন

দর্শকের একটা আক্ষেপ ছিল, বাংলাদেশি সিনেমায় গল্প নেই। আরেকটি কথা শোনা যায়, পরিবার নিয়ে দেখার মতো সিনেমা হয় না আজকাল। এবার সেসব আক্ষেপ মিটিয়েছে জংলি। গল্পনির্ভর সিনেমায় যত্নের ছাপ রেখেছেন পরিচালক। সিয়াম আহমেদ ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকে। ঈদুল ফিতরের ছবি জংলি তাই দর্শকের মনে দাগ কেটেছে দারুণভাবে।
ট্রেইলার মুক্তির পর নড়েচড়ে বসেছিল দর্শক। তারপর আসে সিনেমার প্রমোশন। দর্শকের প্রত্যাশার পারদ চড়িয়ে জংলি যখন মুক্তি পেল, প্রাপ্তির সঙ্গে ঘটেছে তৃপ্তির মেলবন্ধন। বজরঙ্গি ভাইজানে ছোট মুন্নীর সঙ্গে সালমান খানের যুগলবন্দী যতটা অনবদ্য ছিল, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সিয়ামের সঙ্গে নৈঋতার যুগলও হয়েছে দুরন্ত। মূলত সিনেমার প্রাণ ছিল পাখি (নৈঋতা) ও জংলির খুনসুটি।
সিনেমায় নিজেকে ভেঙেছেন সিয়াম। একজন অভিনেতা যখন মন দিয়ে অভিনয় করেন এবং পরিচালক তাকে ব্যবহার করেন চরিত্র অনুযায়ী, সেখানে কৃত্রিমতা ছাপিয়ে যায়। জংলিতে হয়েছে ঠিক তাই। দর্শক এই গল্পে দেখতে পাবে চারপাশের চেনা দৃশ্য। পরিচালক রহিম সবচেয়ে ভালো যে কাজটি করেছেন, সামাজিক বার্তা দিতে পেরেছেন। এখানেই সার্থকতা।
জংলির গল্পকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রেমিক সিয়াম, যিনি ব্যর্থ হয়েছেন। বাবা সিয়াম, যিনি সফল। দুই ভূমিকাতেই ন্যাচারাল সিয়াম চরিত্রের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হন। তাতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে লুক, আবহ সঙ্গীত ও পারিপার্শ্বিকতা। জংলির গানগুলো শ্রুতিমধুর। মনে রাখার মতো অ্যালবাম। অ্যাকশন সিকোয়েন্সে সিয়াম দুর্দান্ত করেছেন।
সিনেমার একটি সংলাপ— ‘মেয়ের গায়ে হাত দিলে ভদ্র বাপও জংলি হইয়া যায়। আর ওর বাপ তো এমনিতেই জংলি।’ একটি সংলাপেই ফুটে উঠেছে সার্বিক চিত্র। বাবাদের কাছে মেয়েরা সবসময়ই রাজকন্যা। সবচেয়ে মধুর সম্পর্কের একটি বাবা-মেয়ের ভালোবাসা। এই সংলাপ, মেয়েকে বাঁচানো, সিয়ামের অ্যাকশন—দর্শকের কাছে মনে হয়েছে নিজেদেরই পর্দায় দেখছেন তারা। যা বাস্তবে করতে পারেন না, কিন্তু মন চায়, সেটিই যখন হিরো করেন, তা উপভোগ্য না হয়ে পারে না।
তবে, নেতিবাচক দিকও আছে। ঠিক নেতিবাচক নয়। এসব ক্ষেত্রে আরেকটু উন্নতির ছোঁয়া দেওয়া যেত। চাইলে প্রেমিক সিয়ামকে আরেকটু ন্যাচারাল করা যেত। যদিও, মূল নজরটা বন্যতায় থাকায় সেটি অনেকটাই আড়ালে পড়ে গেছে। জংলির বাকি কাজ হয়েছে অনবদ্য। শহিদুজ্জামান সেলিম, রাশেদ মামুন অপুর শক্ত চরিত্রায়ন সিনেমার ভার বাড়িয়েছে। দিঘীর চরিত্র দীর্ঘ না হলেও যতটুকু সময় ছিলেন, গল্পটাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলেন।
আমাদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার পেছনে যেমন সমাজের ভূমিকা আছে, হিংস্র হয়ে ওঠার পেছনেও সমাজ দায় এড়াতে পারে না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে, অস্তিত্বের সংকট তৈরি হলে ভেতরের আদিমতা ফুটে ওঠে। খালি চোখে দেখলে মনে হবে, জংলির মতো। অথচ, নাড়া দিয়ে যাবে ভেতরের গল্প।